দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) ইউসুফ আলী সরদারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ নকশাবহির্ভূত দোকান বরাদ্দে ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা সিএমএম আদালত।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।গণমাধ্যমকে ওই আদালতের পেশকার মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালতে ওই মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।মামলার অপর আসামিরা হলেন- ডিএসসিসির সাবেক উপ সহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, জনৈক কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান ও ওয়ালিদ।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা অবৈধভাবে অনৈতিক উপায়ে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি করেন। আর এ অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন করায় দণ্ডবিধির ১৮৬০ সালের ৩৪/১০৯/১২০(খ)/৪০৬/৪১৭/৪৬৮/৪৭৭(ক) এবং ৫০৬ বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে বাদী আদালতে হাজির হয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।

আদালত গত মঙ্গলবারই বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং আজ বুধবার আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআই কে নির্দেশ দিয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতা দেলোয়ার হোসেনের মামলায়, রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ নকশাবহির্ভূত দোকান বরাদ্দের নামে ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) ইউসুফ আলী সরদারসহ ৭জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামি সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, ইউসুফ আলী সরদার ও মাজেদ পরস্পর যোগসাজশে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর মূলভবনের নকশাবহির্ভূত অংশে স্থাপনা তৈরি করেন। তারা দোকান বরাদ্দের ঘোষণা দেন।

তাদের ঘোষণা শুনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান বরাদ্দ নেয়ার জন্য ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ব্যবসায়ীরা আসামি কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদের কাছে যান।

পরে আসামিরা ‘ব্যবসায়ীদের বলেন, আপনার টাকা জমাদানের ব্যবস্থা করুন। আমরা আপনাদের দোকান বরাদ্দ দিয়ে দেব।’ ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর মূল মার্কেটে যাদের নামে দোকান বরাদ্দ রয়েছে তাদের আসামি কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ভুল বুঝিয়ে এ মার্কেটে দোকান বরাদ্দ নিতে বাধ্য করেন।

আসামি সাঈদ খোকন ও মাজেদসহ অন্যরা মিলে প্রতারণা করে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন এবং ব্যবসায়ীদের নকশাবহির্ভূত দোকান বরাদ্দ দেন।

মামলার অভিযোগে অরো বলা হয়েছে, দোকান বরাদ্দের অনৈতিক আইনবহির্ভূত বিষয় জেনে মামলার বাদী দেলোয়ার হোসেন দুলু আসামিদের দোকান বরাদ্দের প্রক্রিয়া বন্ধ এবং ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অনৈতিকভাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনে বাধা প্রদান করেন। এরপর আসামিরা দেলোয়ারকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

২০১৭ সালের ২০ আগস্ট আসামি ইউসুফ আলী সরদার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ বাদী দেলোয়ারকে বনানীতে ডেকে বলেন, ‌‘তুই ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, এর এক্সটেনশন ব্লক- এ,বি,সি এর দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করার প্রক্রিয়া বন্ধ কর, নইলে খুব খারাপ হবে।’

তবে বাদী বলেন, তিনি নিজের ও পরিবারের কথা চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে সাহস পাননি। আসামি সাঈদ খোকন, ইউসুফ আলী সরদার ও মাজেদের নির্দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আসামি কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ দোকান বরাদ্দের কথা বলে বিনা রশিদে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করেন।

সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিনা রশিদে বা কোনো প্রকার ডকুমেন্টস ব্যতীত আসামিদের নিকট বরাদ্দের বিষয়ে টাকা জমা দিয়েছেন,ব্যবসায়ীরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

ব্যবসায়ী মামলার বাদী দেলোয়ারের নিকট পরামর্শের জন্য আসলে তিনি তাদের বলেন যে, যেহেতু আপনারা অনেকগুলো টাকা ইতোমধ্যে বিনা রশিদে নগদ প্রদান করেছেন এবং ভবিষ্যতে আরো টাকা জমা দেবেন।সেহেতু আইনগত প্রমাণ রাখার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে তার প্রতিষ্ঠানের নামে ফুলবাড়িয়া উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে টাকা জমার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ভুক্তভোগীরা আসামি সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময় ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ টাকা জমা দেন।

বর্তমানে ডিএসসিসির মেয়র ফজলে নূর তাপসের এখতিয়ারাধীন এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর এক্সটেনশন ব্লক এ,বি,সি এর স্থাপনা ভেঙে উচ্ছেদ অভিযান চালান।

এই উচ্ছেদের বিষয়ে বাদী দেলোয়ারসহ অপর ব্যবসায়ীরা জানতে পারেন যে, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ অন্য আসামিরা ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর এক্সটেনশন ব্লক এ,বি,সি এর মূলভবনের নকশাবহির্ভূত এবং অবৈধ উপায়ে অনৈতিকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য প্রতারণা করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেন।/