শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলের আধুনিক ৩ মেশিন এক লাখ টাকায় বিক্র: শিগগিরই দুদকের মামলা

দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতে টানা ১০ বছর ভাল সার্ভিসের প্রত্যাশায় প্রায় দেড় কোটি টাকায় ক্রয়কৃত ৩টি অত্যাধুনিক ডিজিটাল কালার আলট্রাসাউন্ড মেশিন মাত্র ৩ বছরের মাথায় নষ্ট ঘোষণা দিয়ে গোপনে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি চা ল্যকর তথ্য পেয়েছে দুদক।

২০১৩ ও ২০১৪ সালে উক্ত হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জন্য চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়ার্সী সার্জিক্যাল আমেরিকান ব্র্যান্ডের মেশিন সরবরাহ করে। অত্যাধুনিক ডিজিটাল কালার আলট্রাসাউন্ড মেশিন ৩টি অন্তত ১০ বছর সক্রিয় থাকার কথা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মাত্র ৩ বছরের মাথায় মেশিনগুলো দফায় দফায় নষ্ট হতে থাকে। অলসভাবে পড়ে থাকা যন্ত্রপাতি মেরামত দেখিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়।

দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুল হাসানের অনুসন্ধানে এসব চা ল্যকর তথ্য প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে এই জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট ধারায় মামলা দাযেরের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। ফলে যে কোন দিন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলাটি দায়ের করা হবে।

অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনে চিহ্নিত অপরাধীদের মধ্যে রয়েছেন ‘স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অফিস সহায়ক মো. মাসুদ রানা (সুমন), অফিস সহায়ক (সাময়িক বরখাস্ত) মোজাফফর হোসেন বাবুল, স্টেরিলাইজার কাম মেকানিক ও ওয়ার্ড মাস্টার মো. বিল্লাল হোসেন এবং ইউনি হেলথ কেয়ারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার রাজীবসহ আরও কয়জন জড়িত। তবে এই মামলার তদন্তে আরও চা ল্য তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে জানা যায়। এই জালিয়াতির পেছনের বড় বড় কারিগর এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে বলে মনে করেন দুদক কর্মকর্তারা।

সূত্র মতে,সর্বশেষ ২০২০ সালে ওই মেশিন ৩ টি সম্পূর্ণ অকেজো দেখিয়ে স্টোর রুমে পাঠানো হয়। এরপর স্টোর রুম থেকে হঠাৎ একদিন নষ্ট মেশিনগুলো উধাও হয়ে যায়। নষ্ট মেশিনগুলো কোথায় গেল, অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা যায় নষ্ট মেশিন বেসরকারি কোম্পানি ‘ইউনি হেলথ কেয়ারের’ কাছে গোপনে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

অথচ প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্রয় করা ‘আলট্রাসাউন্ড মেশিন’ ৩টি ‘ভাঙারি’র দামে মাত্র এক লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। পরে এই বিষয়টি জানাজানি হলে ৩টি মেশিন নাটকীয়ভাবে ফেরত আনা হয়। কিন্তু ফেরত আনা ৩টি মেশিন যাচাই-বাছাই করে দেখা গেল এগুলো অন্য মেশিন। জালিয়াত চক্র দায় এড়ানোর জন্য এটা করেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে শুরুতেই হাসপাতালের জন্য ‘ডিজিটাল কালার আলট্রাসাউন্ড মেশিন’ ক্রয় দেখানো হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে। এরপর পরিকল্পিতভাবে মেশিন ৩টি নষ্ট করা হয়। আবার দয়েক দফা মেরামতের নামেও কয়েক লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, মেশিন ৩টি নষ্ট ঘোষণা দিয়ে গোডাউন পাঠানোর পর হঠাৎ সেখান থেকে ঊধাও হয়ে যায়। এই রুপকথা গল্প খুঁজতে গিয়ে দুদকেরন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব চা ল্যকর তথ্য।

অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে এম এস আর সামগ্রীর আওতায় ডিজিটাল কালার আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন ৪২ লাখ টাকায় ক্রয় করা হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়ার্সী সার্জিক্যাল আমেরিকান ব্র্যান্ডের মেশিন সরবরাহ করে।

এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরের ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকার একই ধরনের মেশিন এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চীনা কোম্পানি থেকে আল্ট্রাসোনোগ্রামের একটি মেশিন আরও বেশি দামে ক্রয় করা হয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ মেশিনগুলো বুঝে নেয়।

স্টোর রুমের চাবির দায়িত্ব ছিল বেলালের। এরপর মেশিনগুলো মাত্র ৩ বছরের মাথায় অস্বাভাবিকভাবে নষ্ট হতে শুরু করে। দফায় দফায় সার্ভিসিং করেও ব্যবহারের উপযোগি করা যায়নি বলে জানানো হয়। পরে ২০২০ সালে পুরোপুরি নষ্ট (কনডেম) ঘোষণার জন্য রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের আওতায় তালিকা প্রস্তুত করা হয়।

যেখানে ওই ৩টি মেশিনসহ ১৩টি আইটেমের ২৭টি মালামাল ‘অকেজো ঘোষণা ও নিষ্পত্তিকরণ’ কমিটির কাছে পাঠানো হয়। যে কমিটির অন্যতম সদস্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রধান সহকারী আব্দুর রহিম ভুইয়াঁ। ওই ৩টি মেশিনসহ অন্যান্য মালামাল কনডেম ঘোষণার পর তার স্বাক্ষরে তা গ্রহণ করা হয়।

স্টোর রুমের ওয়ার্ড মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. সাজ্জাদ হোসেন ও স্টেরিলাইজার কাম মেকানিক মো. বেলাল হোসেন। এর মধ্যে স্টোর রুমের চাবির দায়িত্ব ছিল বেলালের। তার চাবি দিয়েই স্টোর রুম খুলে মেশিন ৩টি ইউনি হেলথ কেয়ারের ইঞ্জিনিয়ার রাজীবের কাছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। জানাজানি হলে ৩টি ভিন্ন মেশিন ইঞ্জিনিয়ার রাজীবের কাছ থেকে এনে স্টোর রুমে জমা দেওয়া হয়। আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনগুলোর সার্ভিসিংয়ের মূল দায়িত্ব পালন করছিলেন ওই রাজীবই।

এদিকে দুদকের অনুসন্ধানী কর্মকতার কাছে জড়িতরা স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। ওই হাসপাতালের অফিস সহায়ক মো. মাসুদ রানা (সুমন) দুদকের কাছে দায় স্বীকার করেছে। অভিযুক্ত সুমন দুদক টিমকে জানান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অফিস সহায়ক (সাময়িক বরখাস্ত) মোজাফফর হোসেন বাবুল স্টোরে থাকা ৩টি মেশিন ‘ইউনি হেলথ কেয়ারের’ ইঞ্জিনিয়ার রাজীবের কাছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এই টাকার মধ্যে সুমন ৮ হাজার টাকা ভাগে পেয়েছে। বাকি টাকা মোজাফফর হোসেন বাবুল ও অন্যরা ভাগ করে নেন।

সুমন দুদকের কর্মকর্তাদের আরও জানান, ওয়ার্ড মাস্টার মো. বিল্লাল হোসেনের কাছে রক্ষিত স্টোরের চাবি দিয়ে স্টোর রুম খুলে মেশিন ৩টি রাজীবের কাছে সরবরাহ করা হয়। পরে মেশিন ৩টি বিক্রির সংবাদ জানাজানি হলে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর, ১১ নভেম্বর ও ১৪ নভেম্বর মেশিন ৩টি ইঞ্জিনিয়ার রাজীবের কাছ থেকে এনে স্টোর রুমে রাখা হয়।

ইঞ্জিনিয়ার রাজীব দুদকের কাছে স্বীকার করেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ২০১২-২০১৩ এবং ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ক্রয় করা আমেরিকা জেনালের ইলেকট্রিক কোম্পানির দুটি ও অন্য ব্র্যান্ডের ডিজিটাল কালার আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন সরবরাহ করা হয়। তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত হাসপাতালের মেশিন সার্ভিসিং করেছেন।

ওই হাসপাতালে মেশিন সার্ভিসিং করার সময় অফিস সহায়ক মো. মাসুদ রানার (সুমন) সঙ্গে পরিচয় হয়। তার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০২০ সালের প্রথম দিকে মেশিন ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সময় বাবুলের সঙ্গেও আলাপ হয়। আলোচনা অনুযায়ী, মাসুদ রানা সুমনের কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় তিনটি মেশিন ক্রয় করেন। # কাশেম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০১ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩০ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৬ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12