দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দেশের বহুল আলোচিত রাজধানীতে বাসা থেকে ঘুষের ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার,অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং এবং অর্থ পাচারের মামলায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে ৮ বছরের কারাদন্ডে রায় প্রদান করেছেন বিচারিক বিশেষ জজ আদালত।
রোববার (৯ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম পৃথক দুই ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে তাকে কারাগার থেকে বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলায় বিচারিক আদালত বিভিন্ন সময়ে ১২ জন সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।
বিচারি আদালত দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পাঁচ বছর এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় তিন বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, রায়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ধারা এবং দন্ডবিধির ১৬১ ধারায় দুদক অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণী না হওয়ায় ওই অভিযোগ আসামীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর একই আদালতের বিচারক রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপ সম্পন্ন করার পর ৯ জানুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পার্থ গোপাল বণিককে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ধানমন্ডিতে তার বাসায় অভিযান চালায় দুদকের কর্মকর্তারা। ওই দিন বিকেলে ধানমন্ডির ভূতের গলিতে পার্থ গোপালের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদকের কর্মকর্তা। এরপরই তাকে আটক করা হয়।
পরদিন ২৯ জুলাই তার বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১৬১ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা করে দুদক।
এরপর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- থেকে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ বদলির আদেশ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর সাবেক ডিআইজি পার্থের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকার বিশেষ জজ-১০-এর বিচারক নজরুল ইসলাম ঘুষ গ্রহণ ও মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় এ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য গত বছরের ১৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
এরআগে গত বছরের ২৪ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন আসামী পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় চার্জশিট দাখিলৈ করেন।
দুদকের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, কারা উপ-মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক (বরখাস্ত) সরকারি চাকরিতে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন। এসব টাকা গোপন করে তার নামীয় কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে বিদেশে পাচারের উদ্দেশে নিজ বাসস্থানে লুকিয়ে রেখেছেন।
যা ফৌজদারি দন্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অবশ্য আসামী সাবেক ডিআইজি পার্থ দাবি করেছেন, ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা শাশুড়ি দিয়েছেন। বাকি ৫০ লাখ টাকা সারাজীবনের জমানো। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।#