বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের এক মাস অতিবাহিত

দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
গস এক মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১৬৪ জন এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন।

মঙ্গলবারই ৪১ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত করার তথ্য জানানো হয়েছে। প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরীক্ষার হার যত বাড়ছে, রোগীর সংখ্যাও অনেকটা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।

একমাসের পরিস্থিতি কীভাবে বিশ্লেষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সী বিবিসিকে বলছেন, ‘পশ্চিমা দেশ নয়, আমরা ভারত বা ব্রাজিলের সাথে যদি তুলনা করি, তখন কিন্তু দেখা গেছে এরকম একটা পর্যায়ে এসে তাদের রোগীর সংখ্যা বহু হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আমাদেরও হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সেরকম একটা চিত্র দেখতে হবে।’ খবর বিবিসি বাংলার ।

‘কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা সেজন্য প্রস্তুত কিনা? আমরা হয়তো রোগী শনাক্ত করতে সক্ষম হবো, কিন্তু পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আমাদের স্বাস্থ্য খাত কতটা প্রস্তুত হয়েছে? আমাদের কি যথেষ্ট আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, চিকিৎসক প্রস্তুত রয়েছে কিনা। রোগী সামলানোর ব্যাপারটি হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলছেন, ‘পরীক্ষা বাড়ার সাথে সাথে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সেটাই এখনো প্রকৃত চিত্র কিনা বলা যাবে না। কারণ আমরা পরীক্ষা কেন্দ্র সবেমাত্র বাড়িয়েছি। এই যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে, তাতে পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়লে হয়তো আসল চিত্রটা বোঝা যাবে।’

‘রোগটি প্রতিরোধ করতে হলে লকডাউনের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এটা যত ভালোভাবে আমরা সেটা করতে পারবো, ততো স্বাস্থ্য খাতের ওপর চাপ কম পড়বে। সেজন্য ত্রাণ, আইনশৃঙ্খলা, মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটা কেন্দ্রীয় সমন্বয় ব্যবস্থা থাকা দরকার।’

ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক বেনজীর আহমেদ বলছেন, ‘যেভাবে সবকিছু হওয়া উচিত ছিল, সেটা হয়নি। কোয়ারেন্টাইনের কথাই যদি বলেন, বিদেশ থেকে যারা এসেছেন, তাদের কোয়ারেন্টাইন ঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। এমনকি অনেকের নাম ঠিকানাও ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। প্রথমেই আমরা সেই সুযোগটা মিস করেছি।’

‘টেস্ট করার সক্ষমতা থাকার পরও এতোদিন পরে টেস্ট বাড়ানো হয়েছে। প্রথম থেকে যদি সেটা করা হতো, তাহলে পরিস্থিতি আরো ভালোভাবে ধরা যেতো, ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতো। কিন্তু সেটাও ঠিক সময়ে করা হয়নি।’

‘যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিংও ঠিকভাবে হয়নি। তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন, কাদের সাথে মিশেছেন, কি করেছেন, সব বিশ্লেষণ করা উচিত ছিল। তাহলে ঝুঁকি অনেক কমতো। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি- সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে সেটা করা উচিত ছিল।’

তিনি বলছেন, যারা শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের ঠিকভাবে চিকিৎসা করা, সংক্রমিতদের সীমাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি জরুরি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন, নমুনা সংগ্রহ করছেন, তাদের প্রশিক্ষণ সুরক্ষার ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করা জরুরি। না হলে হাসপাতালগুলো বা চিকিৎসকরা সংক্রমিত হতে শুরু করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য অনেক হুমকি তৈরি করবে।

প্রথম রোগী শনাক্ত :
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয় ৮ মার্চ। সেদিন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী ও দুইজন পুরুষ।

তাদের মধ্যে দুইজন ইতালি থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন। অপর একজন তাদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।

তিনি জানিয়েছিলেন, আক্রান্তদের মধ্যে দুইজন ব্যক্তি দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। দেশে আসার পর তাদের লক্ষ্মণ ও উপসর্গ দেখা দিলে তারা আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করেন। পরে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।

ইতালি থেকে আসা ওই দুইজন দুইটি আলাদা পরিবারের সদস্য। তাদের নমুনা সংগ্রহের সময় পরিবারের আরও চারজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই চারজনের মধ্যে একজন নারীর করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।

এই ঘোষণা আসার পর মাস্ক, স্যানিটাইজারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। অতিরিক্ত দাম রাখার কারণে বেশ কয়েকটি ফার্মেসি সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।এর পরবর্তী কয়েকদিন ধরে আর নতুন কোনো রোগী পাওয়ার খবর জানায়নি আইইডিসিআর।

১১ মার্চ সংস্থাটি জানায়, যে তিনজন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে দুইজন সুস্থ হওয়ার পথে। আরেকটি পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে তারা সুস্থ জানিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। একই দিন করোনাভাইরাসকে মহামারি বলে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

১৩ মার্চ আইইডিসিআর জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। নতুন রোগী পাওয়া যায়নি।

তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহ হলে যোগাযোগের জন্য বেশ কয়েকটি হটলাইন নম্বর চালু করা হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। তবে অনেকেই অভিযোগ করেন, বারবার চেষ্টা করেও তারা এসব হটলাইনে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি।

স্কুল-কলেজ বন্ধ:
১৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে, ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব স্কুল ও কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর ছুটির সাথে মিলে কার্যত পরদিন থেকেই ছুটি শুরু হয়। পরবর্তীতে অবশ্য সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির সাথে মিলিয়ে এই ছুটি আরো বেড়ে যায়।

করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তি আজ বুধবার (১৮ মার্চ) মৃত্যুবরণ করেছেন।

তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন উল্লেখ করে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, তার কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসে সমস্যা এবং হার্টের অসুখ ছিল। হার্ট সমস্যার কারণে সম্প্রতি তাকে রিংও পরানো হয়। তিনি গত কয়েকদিন হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন।

আইইডিসিআর পরিচালক জানান, বিদেশফেরত সত্তরোর্ধ্ব ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কারণে আরো একজন আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এদিন আইইডিসিআর জানায়, বাংলাদেশে আরো চারজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দুজন ইতালিফেরত, অন্যজন কুয়েত থেকে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা ঘোষণা :
করোনাভাইরাসের আর্থিক প্রভাব কাটাতে ৫ এপ্রিল ৭২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন।

প্রণোদনার এই অর্থ জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। মূলত ক্ষুদ্র, মাঝারি ও রফতানি খাতের জন্য এই প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়।

মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ  বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

সেখানে বলা হয়ে, শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। বাইরের মুসল্লিরা কেউ মসজিদে জামাতে অংশ নিতে পারবেন না। কেউ এই নির্দেশ অমান্য করে মসজিদে ভিড় করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নেবে। অন্য সবাইকে বাসায় নামাজ পড়তে বলা হয়।

বাড়ছে পরীক্ষা, বাড়ছে রোগীর সংখ্যা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা আরো বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত দুটি করে স্যাম্পল পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ ঘোষণার পর থেকেই পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে থাকে, সেই সাথে রোগী শনাক্ত হারও বাড়ে। চৌঠা এপ্রিল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে নয়জন।

মীরজাদী সেব্রিনা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নয়জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। নতুন আক্রান্তের আটজন ঢাকার। আর একজন ঢাকা বাইরের।

সেব্রিনা বলেন, আক্রান্তদের ৯ জনের পাঁচজনের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। তারা ইতিমধ্যে সংক্রমণ আছে, এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন বা পরিবারের সদস্য। দুজন বিদেশ থেকে এসেছিলেন। আর বাকি দুজনের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

পরদিন ৫ এপ্রিল জানানো নয়, নতুন করে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ১৮ জন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৩৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে তাদের শনাক্ত করা হয়।

৬ এপ্রিল নতুন করে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ জনে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যান আরো তিনজন।

৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন ৪১ জন। আর মারা গেছেন পাঁচজন। একদিনে মৃত্যু বা রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে এটাই সর্বোচ্চ। ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এপর্যন্ত বাংলাদেশে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৬৪ জন আর ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। #


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০০ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12