শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৯ অপরাহ্ন

বছরে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ৭৫ হাজার কোটি টাকার করেছে: সিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় ব্যবহার করে অবৈধ পথে ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে এই অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য পরিবেশন করেছেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি। তিনি বলেছেন, যারা বিদেশ থেকে অবৈধপথে টাকা পাঠাচ্ছেন এবং দেশ থেকে টাকা গ্রহণ করছেন তাদের মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং করছে। পাশাপাশি সিআইডির ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও স¤প্রতি কাজ শুরু করেছে।

তিনি বলেন, বুঝে বা না বুঝে কিংবা কারো প্ররোচনায় হোক কেউ অবৈধপথে টাকা পাঠিয়েছেন— তদন্তে কারো বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। বিদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে টাকা পাঠাচ্ছেন সেও হয়তো জানেন না, তার আত্মীয় যারা দেশে টাকা পাচ্ছেন তারাও হয়তো সরল মনেই টাকাগুলো নিচ্ছেন। আমার মেসেজ হলো- ‘যারা টাকা পাঠাচ্ছেন তাদের সচেতন হওয়া উচিত। প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজন যারা দেশে আছেন তাদেরও সচেতন হওয়া উচিত।’

প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেন অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা গেলো না। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন— সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। সিআইডির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা তথ্য মিল পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সরকার বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে এর পরেও বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে অবৈধভাবে কেন টাকা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশিরা। এ প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। আমার বিশ্বাস এ বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে।

তিনি বলেন, সিআইডি ৫ হাজার মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টকে শনাক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্ট অবৈধ কার্যক্রম করছে। আমরা টার্গেট করে তিনটি গ্রæপকে গ্রেফতার করেছি। এর মধ্যে যারা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল সিআইডির তৎপরতায় সেখান থেকে তারা সড়ে আসতে শুরু করেছে। আমরা ইন্টেলিজেন্স বেইজ অপারেশন পরিচালনা করি। সিআইডি ৫ হাজার মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে। দু’একদিনের মধ্যে অবৈধভাবে লেনদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে যাবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিকাশ, রকেট, নগদ ছাড়াও যেসব মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস রয়েছে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে মিটিং করিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে মিটিং না করার কারণ ইন্টেলিজেন্স যাতে ফাঁস না হয়। লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি সৌদি আরবে কাজ করেন। তাদের টাকাগুলো ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এলে দেশের রিজার্ভ অনেক ভারি হতো।

কিন্তু সৌদিতে এজেন্ট আছে। ওই দেশের এজেন্টরা বাংলাদেশি এজেন্টদের কাছে কথা বলে হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। তবে, এটি খুব শিগগির বন্ধ হয়ে যাবে এবং দেশের রেমিট্যান্স বাড়বে।

সিআইডিতে অনেক মামলার তদন্তের জট রয়েছে। মামলার জট কমাতে আপনি কি ভূমিকা পালন করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৪৫টির মতো মামলা সিআইডিতে রয়েছে। যা পাঁচ বছর আগের। বেশিরভাগ মামলাই হাইকোর্টের আদেশ থাকে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি দুই বছরের অধিক যেন কোনো মামলা না থাকে এবং এক বছরের মধ্যে সব মামলার কাজশেষ করতে হবে।

সিআইডি প্রধান বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় তদন্তে নামে সিআইডি। তদন্তে নেমে হুন্ডি কারবারের সঙ্গে জড়িত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গত ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করে এমএফসে হুন্ডি করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা জানতে পারি তারা বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের মাধ্যমে এমএফএস এজেন্ট জড়িত। এ ৫ হাজার এজেন্ট গত ৪ মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। সা¤প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতি এদেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবিলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এ ঝুঁকি মোকাবিলায় সিআইডি হুন্ডি কার্যক্রমের ওপর নজরদারি শুরু করে। অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় যে, একটি সংঘবদ্ধচক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং অপরাধ করে আসছে।

সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র প্রবাসে বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রাসংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রæপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মূদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চান তাদের দেন। দ্বিতীয় গ্রæপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় এ অর্থ এমএফএস এজেন্টকে দেয়। তৃতীয় গ্রæপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।

এসব চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করেছে। এমএফএস এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনা-বেচা, স্বর্ণচোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে- আক্তার হোসেন (হুন্ডি এজেন্ট), দিদারুল আলম সুমন (হুন্ডি এজেন্ট), খোরশেদ আলম ইমন (হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী), রুমন কান্তি দাস জয় (বিকাশ এজেন্ট), রাশেদ মাঞ্জুর ফিরোজ (বিকাশ এজেন্ট), মোঃ হোসাইনুল কবির (বিকাশ ডিএসএস), নবীন উল্লাহ (বিকাশ ডিএসএস), মো. জুনাইদুল হক (বিকাশ ডিএসএস), আদিবুর রহমান (বিকাশ ডিএসও), আসিফ নেওয়াজ (বিকাশ ডিএসও), ফরহাদ হোসাইন (বিকাশ ডিএসও), আবদুল বাছির (বিকাশ এজেন্ট), মাহাবুবুর রহমান সেলিম (বিকাশ এজেন্ট), আবদুল আউয়াল সোহাগ (বিকাশ এজেন্ট) ও ফজলে রাব্বি (বিকাশ এজেন্ট)।

তাদের কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, চারটি সিমে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ ইলেকট্রনিক মানি ও ৩৪টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মোট চারটি মামলা করেছে সিআইডি। #


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০০ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12