বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

করোনা পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিলেন ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া ও ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
কোভিড -১৯ এর সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে ,প্রাণঘাতি করোনা হিংস্রতা নিয়ে সবাইকে সুস্থ থাকার বিষয়ে সুচিন্তিত কিছু পরামর্শ ও মতামত ব্যক্ত করেছেন দেশের দুইজন খ্যাতনামা চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।

শনিবার (২ মে) অনলাইন নিউজ পোটাল ‘ দূরবীণ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের’ পাঠকদের জন্য এই দুই চিকিৎসকের লেখা প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

কোভিড-১৯ এর এই অদ্ভুত সময়ে আমাদের জীবন যাপন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বদলে গেছে প্রতিদিনের অভ্যাসগুলো, এমনকি আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ধরনগুলোও। আমরা এখন অফিস করি বাসায় বসে, বাজার করি সেটাও অনলাইনে।

শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এই যে ইতিহাসের দীর্ঘতম সরকারী ছুটি, শুধু বাংলাদেশেই না বরং গোটা পৃথিবীতেই, তাতে ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রের ক্ষতির মাত্রানজিরবিহীন। শুধু আমাদের সরকারই প্রথম পর্যায়ে কোভিডের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দ করেছে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর এই ক্ষতির পারদটা যাতে আরো উর্ধ্বমুখী না হয়, আমরা যাতে আরো তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে পারি আমাদের স্বাভাবিক জীবনে, সেজন্যই আমাদের এই দীর্ঘ লক-ডাউন।

লক-ডাউনের এই সময়টায় বিশেষ করে হাসপাতালগুলোয় স্বাস্থ্যসেবা অনেকটাই সংকুচিত করে আনা হয়েছে। এর কারণ কিন্তু এই নয় যে আমাদের সহকর্মীরা, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা তাদের দায়িত্ব পালনের জায়গা থেকে সরে এসেছেন। বরং প্রতিদিন আমাদের এমনি অনেক সহকর্মী কর্মক্ষেত্রে কোভিড সংক্রমিত হয়ে দফায়-দফায় প্রমাণ করছেন, মানবতার সেবায় তাদের অঙ্গীকার।

হাসপাতাল সেবা সংকুচিত করার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে এই সময়টায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কোভিড -১৯ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায় এবং প্রয়োজনে কোভিড রোগীদের সেবায় তাদের আরো বেশী সংখ্যায় কাজে লাগানো যেতে পারে।

পাশাপাশি স্বাস্থসেবা প্রদানকারীরা যদি সংক্রমিত হন তাহলে তারা যে শুধু তাদের পরিবার-পরিজনকেই সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলবেন তা-ই নয়। বরং তারা হয়ে উঠতে পারেন ‘সুপার স্প্রেডার’, অর্থাৎ তাদের থেকে এই রোগ খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে তাদের অন্যান্য রোগীসহ হাজারো মানুষের মাঝে।

কিন্তু তাই বলে রোগ-শোকতো থেমে থাকে না। লকডাউন, সংকুচিত চিকিৎসা সেবা আর পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অবর্তমানে সাধারণ রোগীদের সুযোগ নেই আগের মত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার। করোনা কালে আমাদের জীবনে আরো অনেক নতুনের মধ্যে অন্যতম সংযোজনটি হচ্ছে টেলি-মেডিসিন।

এজন্য এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া আর বেশ কিছু নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন। ঘরে বসেই নাগরিক সুযোগ পাচ্ছেন টেলিফোনে চিকিৎসা সেবা নেয়ার।

এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র চিকিৎসা সহায়তা কমিটি। চলমান লক ডাউন শুরুর পরপরই প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এই কমিটি প্রথম পর্যায়ে সারা দেশে ফেস্টুন ও ইশতেহারের মাধ্যমে চলমান সংকটকালে করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ১০৮ সদস্যের একটি প্যানেল ঘোষণা করেছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/একাত্তরের-ঘাতক-দালাল-নির্মূল-কমিটি-104792680905616/-এ এসব চিকিৎসকদের বিস্তারিত তথ্য পোস্ট করা হয়েছে। দেয়া আছে তাদের মোবাইল নম্বর, বিশেষায়নের ক্ষেত্র ও টেলি-কনসাল্টেশনের সময়সূচী। এসব নম্বরে ফোন করে যে কোন ব্যাক্তি চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

তবে করোনা কালের এই দিনগুলোতে সবচেয়ে যা জরুরী তা হলো মাথা ঠান্ডা রেখে ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তটি নেয়া। আমরা এখন সবাই কম-বেশী জানি যে অল্পকিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোভিড-১৯এর মূল লক্ষণগুলো হলো জ্বর, শুকনো কাশি আর শ্বাসকষ্ট।

এর সাথে কারো-কারো শরীর ব্যাথা, ডায়রিয়া আর ঘ্রাণ নেয়ায় সমস্যা থাকতেও পারে। আর সবচেয়ে বড়কথা ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন কোভিড রোগীর তো রোগের কোন লক্ষণই থাকে না। তাই বলে কোভিডের মত লক্ষণ দেখা দিলেই যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বা কোভিডের পরীক্ষা করতে হবে ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়।

জ্বর, কাশির মত কোভিড-লাইক লক্ষণ দেখা দিলে ধৈর্য ধরে প্রাথমিক পর্যায়ে বাসাতেই চিকিৎসা নেয়া যায়। জ্বরের জন্য ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পরপর প্যারাসিটামল ট্যাবলেট আর কাশির জন্য যে কোন একটি এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট প্রতি রাতে খাওয়া যেতে পারে। যদি জ্বর ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে না কমে বরং বাড়তে থাকে কিংবা শ্বাস কষ্টের সমস্যা দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে কোভিডের পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী।

মনে রাখতে হবে যদি পরীক্ষায় কোভিড ধরাও পরে, কিন্তু শ্বাসকষ্ট না থাকে সেক্ষেত্রেও হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় চিকিৎসা নেয়াটাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যাকে তারা তাদের ভাষায় বলেন ‘হোম আইসোলেশন’। তবে যদি কোভিড আক্রান্ত রোগীর অন্য কোন অসুখ যেমন ক্যান্সার, ফুসফুস, হার্ট, কিডনি কিংবা লিভারের বড় ধরনের সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন ইত্যাদি থাকে তাহলে তার জন্য হোম আইসোলেশন নয়। একইভাবে ষাটোর্ধ্ব রোগীদের বেলাতেও হোম আইসোলেশন প্রযোজ্য নয়।

যখন কেউ হোম আইসোলেশনে থাকেন তখন নিজ বাসায় থাকলেও তাকে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তিনি একটি আলাদা রুমে থাকবেন এবং তার সাথে পরিবারের অন্য কোন সদস্য থাকতে পারবেন না।

এমনকি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের সদস্যরা তার সাথে দেখাও করবেন না। আর যদি দেখা করতেই হয়, তবে তা করতে হবে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে, ঘরের বাইরে থেকে। তার খাবার-দাবার ঘরের দরজার বাইরে রেখে আসতে হবে।

খাবার শেষে পরিবারের সদস্যরা আবার দরজার বাইরে থেকে সেসব সংগ্রহ করে আলাদা করে সাবান দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নেবেন এবং পরিবারের ঐ সদস্যটি তার নিজের হাতও ভাল করে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ধুয়ে নেবেন। আইসোলেশনে থাকা রোগীকে সাহায্য করার জন্য পরিবারের এমন একজন সদস্যকে বেছে নেয়া ভাল যার কোন দীর্ঘমেয়াদী রোগ নেই।

আাইসোলেশনের কামরা থেকে কার্পেটসহ সব ধরনের বাড়তি আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে হবে। ঘরটিতে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এসময়ে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যেমন মাস্ক, টিস্যু বক্স, গ্লাস, পানির বোতল, থার্মোমিটার, আবশ্যকীয় ওষুধপত্র ঘরেই রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাল হয় যদি ঘরে একটা ইলেকট্রিক কেতলি রাখা যায় যাতে রোগী নিজেই মাঝে-মাঝে হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করতে পারেন। ঘরটিতে অবশ্যই একটি ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন রাখতে হবে যেখানে রোগীর ব্যবহৃত টিস্যু, মাস্ক ইত্যাদি ফেলতে হবে।

যিনি আইসোলেশনে আছেন তিনিতো বটেই, তার পরিবারের সব সদস্যকেও সার্বক্ষণিকভাবে ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এজন্য এন-৯৫ বা সার্জিক্যাল মাস্কের প্রয়োজন নেই। সাধারণ মাস্ক ব্যবহারই যথেষ্ট। ভাল হয় যদি বাসায় কাপড়ের তিন স্তর বিশিষ্ট মাস্ক তৈরী করে নেয়া যায়। একটি মাস্ক একবার ব্যবহারের পর ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

সম্ভব হলে আইসোলেশনে থাকা পরিবারের সদস্যটির জন্য একটি আলাদা ওয়াশরুম নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে সেটা যদি কোন কারণ সম্ভব না হয় তবে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহারের পর ওয়াশরুম ব্যবহার করবেন এবং যতটা পারা যায় ভালভাবে পানি দিয়ে ওয়াশরুমটা ধুয়ে নেবেন।

খুব ভাল হয় যদি ২০ লিটার পানির সাথে ১ টেবিল চামচ পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে ২০ লিটার জীবানুনাশক তৈরী করে নিয়ে তা ওয়াশরুমে ছিটিয়ে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, এমনকি বাসার আসবাবপত্র এবং বাসার আশেপাশেও এই জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে।

বিশেষ করে মোবাইল, ল্যাপটপ, দরজার হ্যান্ডেল, হাত ধোয়ার বেসিন ইত্যাদি অর্থাৎ যেসব স্থানে আমরা সবসময় হাত দিই, সেসব জিনিসগুলো এই জীবানুনাশক দ্রবণ দেয়ে দিনে বেশ কয়েকবার মুছে নিতে হবে। যেখানে আরেকটি ভাল অভ্যাস হলো বাইরে থেকে বাসায় ফিরে জুতার তলায় এই জীবানুনাশক দ্রবন ছিটিয়ে দেয়া, তা বাসায় কোভিড রোগী থাকুক বা না-ই থাকুক।

এ সময়টায় ভাল থাকার জন্য কিছু-কিছু অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। বেশি করে পানি খেতে পারেন এবং তা কুসুম গরম হলেই ভাল। খাবার বেলায়ই একটু সচেতন হওয়া উচিত। বিশেষ করে রাতের বেলা ভাতটা বাদ দিতে পারলে মন্দ হয় না। ভিটামিন সি <span style=”font-family:”Vrinda”,”san . ।    # কাশেম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০০ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12