শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন

এবারও পুরান ঢাকার আকাশে উড়েছে রং-বেরঙের ঘুড়ি

দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঢাকাবাসী ঐতিহ্য, রক্ষায় এবারও পুরান ঢাকার আকাশে উড়েছে রং-বেরঙের ঘুড়ি। পুরান ঢাকায় ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দটা সত্যিই উপভোগ করার মতো। ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবকে সাকরাইন উৎসব হিসেবে নাম করন করা হয়েছে বহুআগে থেকেই।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকেই পুরান ঢাকায় বাসাবাড়ির ছাদে চলছে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রস্তুতি। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা-মাঞ্জা দেওয়া থেকে শুরু করে গান-বাজনাসহ পিঠা উৎসবেরও আয়োজন চলতে থাকে। বিপুল উৎসাহে ছোটবড় সবাই মেতে উঠেছেন সাকরাইনের আনন্দে।

 

বাংলা বর্ষ অনুযায়ী আজ শুক্রবার পৌষের শেষ দিন বা পৌষ-সংক্রান্তি। এই সংক্রান্তি কথাটিই পুরান ঢাকায় সাকরাইন নামে পরিচিত। আর সাকরাইনের মূল বৈশিষ্টই হলো ঘুড়ি উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে প্রায় একমাস আগে থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। বিশেষ করে এ এলাকার দোকানিদের ঘুড়ি এবং ফানুস বানানোর তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায় বেশ জোরেসোরে।

পুরান ঢাকার বাসাবাড়ির ছাদগুলোতে এখন কিশোর-কিশোরীদের ঢল আর হৈ-হুল্লোড়। তাদের হাত ধরে আকাশে উড়ছে চোখদার, পানদার, বলদার, দাবাদার, লেজওয়ালা, পতঙ্গ ইত্যাদি নামের ঘুড়ি। নিজের ঘুড়িকে সবচেয়ে ওপরে তোলার প্রতিযোগিতা নিয়ে রয়েছে ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াইও। এছাড়া বেশ কয়েকটি বাসার ছাদে শুরু হয়েছে সাউন্ড সিস্টেমে গানবাজনাও।

পুরান ঢাকার লোকজন জানায়, দুপুরের পর থেকেই আকাশের বুকে বাড়তে থাকবে ঘুড়ির সংখ্যা। ঘরে ঘরে হবে পিঠাপুলির উৎসব। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই আকাশে উড়বে রংবেরঙের ফানুস। আতশবাজির আলোয় উজ্জ্বল হবে পুরান ঢাকার আকাশ। সন্ধ্যা পার হলেই শুরু হবে সাউন্ড সিস্টেম আর নাচ-গান।

লোকজন বলেন, এক সময় ঘুড়ি, নাটাই আর মাঞ্জাতে সীমাবদ্ধ থাকলেও সাকরাইনের পরিসর এখন ব্যাপক। দিনের প্রথম পর্বে চলে ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা। গোত্তা খাওয়া ঘুড়ি এবং ‘ভোকাট্টা’ রবের সঙ্গে সাউন্ড সিস্টেমের তালে তালে গানবাজনার মাধ্যমে আনন্দ-উল্লাস চলতে থাকে শীতের মিষ্টি বিকেল জুড়ে।

সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয়ে যায় চোখ ধাঁধানো আতশবাজির প্রদর্শনী। লেজার শো আর ‘ডিস্কো লাইট’ এর পাশাপাশি কেউ কেউ কেরোসিন মুখে মশালে ফুঁ দিয়ে অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে। সন্ধ্যার আকাশে ঘুড়ির জায়গা নেয় রঙিন ফানুস। আলোর ঝলকানিতে ঢেকে যায় পুরান ঢাকার সম্পূর্ণ আকাশ।

এদিকে এবার প্রশাসন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন/ঘুড়ি উৎসব নিয়ে শতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছিল। পৌষ মাসের শেষ দিন পৌষ সংক্রান্তির এ অনুষ্ঠান ঘিরে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, ১৪ জানুয়ারি পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সাকরাইন উৎসব উদযাপন করা হবে। তবে ঘুড়ি ওড়ানো,আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন করা হয়।তবে এ বছর থার্টিফার্স্টে ফানুস পড়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ড ঘটায় সাকরাইন উৎসব নিয়ে সতর্ক অবস্থানে যাচ্ছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও চলছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব। সারাদিন তরুণ-তরুণীদের ঘুড়ি ওড়ানো, ঢাকাইয়াদের বাড়ি বাড়ি পিঠা উৎসব, বাড়িতে আর ছাদে জমকালো আলোকসজ্জা, আগুন নিয় খেলা, সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব ঘুড়ি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে এতে যোগ হয়েছে আতশবাজি, মুখে কেরোসিন নিয়ে মুখের সামনে আগুনের মশাল ধরে আগুন খেলা, ডিজে নাচ, প্রজেক্টর আর উচ্চশব্দে গানসহ আধুনিক নানা অনুষঙ্গ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে পুরান গেন্ডারিয়া, শাখারিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, ফরাশগঞ্জ, সূত্রাপুর, নারিন্দা, স্বামীবাগসহ পুরান ঢাকার বাসা-বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো হচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলে আকাশে বাড়তে থাকে ঘুড়ির রাজত্ব। গোধূলী লগ্ন থেকে শুরু হয় আতশবাজি আর ফানুসের ছড়াছড়ি। সন্ধ্যা গড়ালে বাড়তে থাকে আতশবাজি, উচ্চশব্দে গান আর ডিজে নাচ।

ঘুড়ির চেয়ে আতশবাজি আর ডিজের প্রতি তরুণ-তরুণীদের আসক্তি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তরুণ-তরুণীরা দুই একদিন আগে থেকেই ব্যস্ত থাকেন আতশবাজি আর ব্যান্ড পার্টির আয়োজনে। সন্ধ্যার পর পুরান ঢাকার বাসাবাড়ির ছাদে দলবল নিয়ে শুরু হয় মাত্রারিক্ত ডিজে, আতশবাজি আর ফানুসের ছড়াছড়ি।

পুরান ঢাকার শিংটোলা পঞ্চায়েতের রঘুনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, ছেলে-মেয়েদের এখন ঘুড়ির প্রতি আগ্রহ কম। ঘুড়ির চেয়ে আতশবাজি আর রাতে ডিজে পার্টি করেই তারা উৎসব পালন করে। আমরা সকাল-সন্ধ্যা ঘুড়ি ওড়ানো আর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা করতাম।

তিনি বলেন, আমাদের মাসি পিসিরা বিভিন্ন রকমের পিঠা বানাতেন, এখন সেটি নেই। এখন আমাদের ঢাকাইয়াদের খুব কম বাড়িতেই পিঠা উৎসব চলে।

লক্ষ্মীবাজার এলাকার একদল যুবক বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুড়ি ওড়াই, রাতে তো আর ঘুড়ি ওড়ানো যায় না। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আতশবাজি আর নাচ-গানই চলে বেশি। দিনের আয়োজনের চেয়ে রাতের আতশবাজি, ডিজে পার্টির নাচ-গান আর রং মাখামাখিতেই তারা বেশি আনন্দ ভোগ করেন বলে জানান।
#


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০০ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12