শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১১ অপরাহ্ন

আরো কঠোর লকডাউন পালন. খাদ্য ও অর্থ-সাহায্যসহ স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেই লকডাউন শিথিল করে ৩১ মে থেকে জুন ১৫ পর্যন্ত সীমিত পরিসরে’ অফিস-আদালত, গণ-পরিবহন, স্টক মার্কেট, বাজার-ঘাট ইত্যাদি খোলার সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে সরকার।যাদিও সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নিদের্শনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই সারাদেশে করোনাভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মুত্যুর সংখ্যা ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অন্ততঃ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত, অথবা পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। মাস্কের যথাযথ ব্যবহার কঠোর ভাবে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আর এই বিষয়টি নিয়েই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সারাদেশের সচেতন মানুষের মাঝে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, বাংলাদেশের অন্ততঃ ১২ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে এবং ১৫-২০ লাখ মানুষ মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।এদিকে সরকারের সিদ্ধান্ত অফিস আদালত, পরিবহন চালু এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার খেসারত দিতে হবে গোটা দেশবাসীকে। সরকারের লকডাউন প্রত্যাহার করে ধীরে ধীরে সব কিছু চালুর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হতে পারে। এমনটা আশঙ্কা করছেন দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, সমাজ বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের অনেকেই ।তাদের ভাষ্যমতে, যদিও দীর্ঘ সময়ের লকডাউন আমাদের কারুরই কাম্য নয়। দেশের মানুষের মূল চাওয়া হলো স্বল্পতম সময়ে করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনা, যাতে আবার স্বাভাবিক জীবনের দিকে যাওয়া যায়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদ ও বিশেষজ্ঞদের প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।

তার ভিত্তিতেই এই অভিমত এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাচ্ছেন যে: কমপক্ষে আরও এক মাস কঠোর লকডাউন পালনের পাশাপাশি খাদ্য ও অর্থ-সাহায্য সহ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুতিই হবে এই মুহূর্তের সবচেয়ে সময়োচিত পদক্ষেপ। কিন্তু সেটা হয়নি।

লকডাউন” উঠিয়ে দেওয়ার ফলাফল যা হতে যাচ্ছে:
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি গত মার্চের ২৬ থেকে কয়েক দফায় বাড়ানো দুই-মাস ব্যাপী “সাধারণ ছুটি” দেশের মানুষ সে অর্থে “লকডাউন” হিসেবে পালন করেনি। মানুষকে সঠিক তথ্য জানানোর প্রক্রিয়ায় অনেকটা অস্পষ্টতা এবং প্রয়োগের শৈথিল্য ছিল। ক্রমে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে , করোনায় সংক্রমণ ও মানুষের মৃত্যুহার অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। হাট, বাজার মার্কেট শহর বন্দর, শিল্পাঞ্চল ও বিভিন্ন ঘনবসতি নগরাঞ্চল থেকে করোনা দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে।

সংক্রমণের গতি এখন ঊর্ধ্বমুখী – এপ্রিলে যা ৯.৫% ছিল মে মাসের শেষে ২২%-এ দাঁড়িয়েছে এবং বর্তমানে আরো অনেক বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় একটি দেশের সংক্রমণ যে পর্যায়ে এলে “লকডাউন” শিথিল করা যেতে পারে বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেই শর্তপূরণ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে।ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ধস:
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগে থেকেই বাংলাদেশের লোকজনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। এখন সেটি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ার অবস্থায় এসেছে। করোনার জন্য তো বটেই, অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, কিভাবে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ছে। এই সময়ে লকডাউন উঠিয়ে “স্বাভাবিক” অবস্থায় ফেরা এই ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছু হবে না। একটি অপ্রতুল ও নড়বড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং ব্যাপক মৃত্যুর মিছিলের সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী গভীর আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে আজ।

হার্ড ইমিউনিটির নিশ্চিত ভয়াবহতা :
বিশ্বের সকল দেশ যখন হার্ড ইমিউনিটির (herd immunity) পথ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে “লকডাউন” তুলে দেয়ার মাধ্যমে ঠিক সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছি। কোন সংক্রামক রোগের বিপরীতে টীকা প্রয়োগ ছাড়া এ যাবৎ পৃথিবীতে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের নজির নেই। করোনার ক্ষেত্রে এই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে হলে কি করতে হবে, তার কোন পরীক্ষিত তথ্য নেই। করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ কেউ বলছেন অন্ততঃ ৭০-৮০% ভাগ জনগোষ্ঠীকে সংক্রমিত হতে হবে। তার মানে দাঁড়ায় যে, বাংলাদেশের অন্ততঃ ১২ কোটি মানুষকে আক্রান্ত হতে হবে এবং ১৫-২০ লাখ মানুষের মৃত্যূ নিশ্চিত অপেক্ষা করছে।

ইতোমধ্যে অসংখ্য ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, পুলিশ সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি চাকরীজীবী ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেক প্রিয়জনরা করোনায় মারা গেছেন। যাদেরকে হারিয়েছি,তাদেরকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। আরো যে, কতজনকে হারাতে হবে এটাই উদ্বেগের বিষয়। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের ১৫-২০ লাখ মানুষকে হারাবো। সমাজের বিভিন্ন কাতারের এবং ভাল ভাল মানুষকে এভাবে হারাতে হচ্ছে। এটা তো ভাবাও যায় না।ব্যবসা ও অর্থনীতির জন্য এই সিদ্ধান্ত কি কি বিপদ ডেকে আনবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্বেগের বিষয়, দেশের অর্থনীতি নিয়ে। করেনায় তবে মানুষের জীবনের চেয়ে কোনো ভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বড় হতে পারে না। বরঞ্চ নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়তে দিলে অচিরেই ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশি ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখে পড়বে। উপরন্তু গোটা দুনিয়াতে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তখন হয়তো দেখা যাবে আরো ভঙ্কর পরিস্তিতি।
বাংলাদেশে করোনা-প্রকোপিত অঞ্চল হিসেবে বাকি দুনিয়ার অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা সময়মত কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন না, তাদের বদলে অন্য দেশ থেকে শ্রমিক নিবে ওইসব দেশগুলো। একই সাথে আমদানি ও রফতানিতেও আমরা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বো।
সম্ভাব্য নৈরাজ্য:
বিশেষজ্ঞদের মতে, করেনার হিংস্রতায় এদেশের যোগ্য , ভাল ও চেনাজানা আর ভালোবাসার মানুষগুলো এখন আমাদের ছেড়ে দ্রুত চলে যাচ্ছেন। কারণ একটি দুর্বল প্রশাসন ও অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থাও অনেকটা দায়ী। একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হবে। দেশের ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের দিকেই দ্রুত ধাবিত হবে। এধরণের নৈরাজ্যের নিদর্শন আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছি।

এই মুহূর্তে যা যা করণীয়:
বিশেষজ্ঞদের মতে, লকডাউন তুলে দেয়ার আগে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী কিছু শর্ত পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় নেয়া উচিত ছিল। বেশীরভাগ দেশ যারা লক ডাউন শিথিল করেছে বা উঠিয়ে নিয়েছে তাঁরা আগে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে:
প্রচুর পরিমাণে টেস্টিং এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং এর সক্ষমতা অর্জন হাসপাতালগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া। করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়া।
সরকারি-বেসরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের “নিউ নরমাল” পরিস্থিতিতে পরিচালনার গাইড লাইন তৈরী হওয়া।
টেস্টিং বাড়াতে হবে ব্যাপক আকারে, এবং টেস্টিং আরো বাড়াতে হবে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ন্যূনতম ব্যয়ে রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। আর কোনো সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সরকারি তহবিল থেকে অবিলম্বে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করে ভাসমান ও কর্মহীনদের জন্য অবশ্যই অন্তত এক মাসের খাবার ও জরুরি ওষুধের সংস্থান করতে হবে। সারাদেশে খাদ্য মজুদের যথাযথ ব্যবহার করে অন্তত ৩ কোটি পরিবারকে বাড়িতে চাল,ডালসহ প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রি পৌঁছে দেয়া। এই ৩ কোটি পরিবারকে চলবার জন্য ৫ হাজার টাকা করে ১৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ এক মাসের এই কার্যকরী লক ডাউনের আবশ্যকীয় শর্ত হতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন করেনা সংকটের যে পর্যায়ে বাংলাদেশ পৌঁছেছে, তাতে সঠিক ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেয়ার এটিই সম্ভবত সর্বশেষ সুযোগ। কারণ তথ্য ও নির্দেশনার সংকটের কারণে মহামারীর শুরুর সময়টিতে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বা তার শিথিল প্রয়োগে বড়ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এখন আর ওই ধরনের ভুল করাটা ঠিক হবে না।দ্রুত গুলিদ্রুত সংশোধন করতে হবে। এই পর্যায়ে দেশের আপামর জনগণ দিকভ্রান্ত হলে তার মাশুল গুণতে হবে অনেক বেশি।

এমন একটি ক্রান্তিকালে আমাদের রাষ্ট্রের নেতৃত্ব বিচক্ষণ অভিভাবক ও সত্যিকার যোদ্ধার মতো বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে, জন মানুষের নিরাপত্তা ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতিকে এই মহামারীর করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করবেন, এটিই বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত প্রত্যাশা। # কাশেম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০০ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12