দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
রাজাকারের তালিকায় যাদের নাম গিয়েছে তারা সক্রিয় ছিল কিনা তা যাচাইয়ের ব্যাপার বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাজ্জেম হক। তিনি বলেন উনাদের নাম যে তালিকাতে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সমস্ত ডকুমেন্টারি এভিডেন্স আছে।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) তিনি আরো বলেন, এগুলো দেখাশুনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তখনকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কাছে তালিকা চাওয়া হলেছিল। তারা হয়তো তাদের অজ্ঞাতে নাম দিয়ে দিয়েছে। সেই জন্যই এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
বিকালে প্রশ্নোত্তর পর্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত এবং পরে বাতিলকৃত রাজাকারের তালিকা সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাব দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। এই সম্পর্কিত একটি লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রী তালিকার ব্যাপার নিজ মন্ত্রনালয়ের কোন দায়িত্ব না থাকার দাবি করে শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকা প্রকাশ করার কথা জানালে তিনজন সংসদ সদস্য ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রশ্ন করেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য সরকারি দলের রফিকুল ইসলাম বীরোত্তম প্রশ্ন করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষন করছি। প্রকাশ করার কারণে মন্ত্রনালয়ের দায় অবশ্যই আছে।
কে দিয়েছে সেটা জানিনা। না হয়তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ই সেই তালিকা প্রকাশ করতে পারতো। তিনি প্রকাশ করেছেন, তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। উনি এখন পর্যন্ত রাজাকারের সঠিক কোন তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি আর পারবেন না। ৫ বছর ধরে রাজাকারের তালিকা দেয়ার কথা বলে আসছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত পারেননি, আর হয়তো পারবেন না। আমার কথা হচ্ছে সঠিক যে তালিকা আছে উনি সেটা প্রকাশ করুন।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা সংসদে বলেছিলাম আমরা কোনো তালিকা তৈরী করবোনা। যে তালিকা আছে সেটা প্রকাশ করবো এবং যথযথ তাই হয়েছে। আমরা যেটা পেয়েছি সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ও প্রণয়ন করেনি। তাদের কাছে যা সংরক্ষিত ছিল সেখান থেকে যে তালিকা আমাদেরকে সরবরাহ করা হয়েছে তাই আমরা প্রকাশ করেছি।
আমি আর কোনো ডিফেন্সে যাচ্ছিনা, এইটুকু বলতে চাই, রাজাকারের তালিকায় যাদের নাম দিয়েছে তারা সক্রিয় ছিল কিনা তা যাচাইয়ের ব্যাপার।
উনাদের নাম যে তালিকাতে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সমস্ত ডকুমেন্টারি এভিডেন্স আছে। এগুলো দেখাশুনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তখনকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কাছে তালিকা চাওয়া হলেছিল। তারা হয়তো তাদের অজ্ঞাতে নাম দিয়ে দিয়েছে। সেই জন্যই এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে যাচাই বাছাই করেই তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তার আগে মোজাম্মেল হোসেন রতন এক সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, তালিকা প্রকাশের দায়িত্ব মন্ত্রনালয়ের ওপর বর্তায়। সঠিক তালিকা ২৬ মার্চের আগে প্রকাশ করা হবে কিনা জানতে চান তিনি।
জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, প্রকাশিত তালিকার জন্য দু;খ প্রকাশ করে সেটি প্রত্যাহার করেছি। ভবিষ্যতে যাতে কোনো রকরেম ভুল না হয় সকলের সহযোগিতা নিয়ে তালিকা প্রকাশ করবো।
ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, আমার জানামতে এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে জানি, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তৎকালনি ইপিআরে যারা ছিল তাদেরকে রাজাকার হিসেবে ব্যবহারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল।
যারা পূর্ব পাকিস্তান আনসারে ছিল তারা রাজাকার। কিন্তু ৫০ বছরে যখন আমরা তখন এসে জাতির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি যেন না করা হয়। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন অনেক রাজাকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পথ দেখিয়েছিল। দিনের বেলায় পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সাথে থাকতো আর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক বাহিনী কোথায় আছে পথ দেখাতো। মুজিব বর্ষ পালনের এই সময়ে বিভ্রান্তিকর এমন কিছু করতে যেন মন্ত্রী না যান।
জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, তিনি প্রশ্ন করেননি। উপদেশ দিয়েছেন। উনার উপদেশ মনে রাখবো। অবশ্যই বিবেচনায় নেব।
তার আগে মোঃ ফরিদুল হক খান দুলালের (জামালপুর-২) লিখিত প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রাজাকারের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রণয়ন করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়য়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালযয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ হতে ১০ হাজার ৭৮৫জন রাজাকার-আলবদর-আলশামস এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের একটি তালিকা এ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।
প্রাপ্ত তালিকা হুবহু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উক্ত তালিকা প্রস্তুত করেনি সেহেতু প্রশ্ন উত্থাপিত বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।#