দূরবীন নিউজ প্রতিবেদক :
সারাদেশে ভোক্তা-স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক ডিভিশন অথবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের দাবি জানিয়েছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক আমলা গোলাম রহমান।
তিনি বলেছেন, গতসেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ , চাল, ডাল, ময়দা, আটা, সয়াবিন তেল, ডিমসহ নানা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীতকালীন সবজির দাম এখনও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। কয়েকদিন আগে লবণের দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে, তবে স্বস্তির কথা এখন তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। এমতা অবস্থায় ভোক্তা-স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক ডিভিশনের কোনো বিকল্প নেই।
বুধবার ( ২৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব সভাপতি আমলা গোলাম রহমান এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরোও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ক্যাবের ভোক্তা অভিযোগ নিস্পত্তি জাতীয় কমিটির আহবায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও ক্যাবের মুন্সিগঞ্জ জেলা সভাপতি প্রমুখ।
গোলাম রহমান বলেন, গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে খুচরা বাজারে ২২০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। গত ২০১৭ সালেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
গোলাম রহমান বলেন, পেঁয়াজ রান্নার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। বর্তমানে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। উৎপাদিত পেঁয়াজে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। দূরবর্তী চীন, মিশর, তুরষ্ক বা পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রায় সবটাই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাহত হলে অথবা মূল্য বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব প্রায় সাথে সাথে বাংলাদেশের বাজারে পড়ে।
তিনি বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরো বন্ধ করে দেয়। ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হত। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় বাংলাদেশে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয় ও দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বাজারে বড় ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানিতে নিরুৎসাহিত করে। সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে টিসিবির ডিলারদের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করে।
ক্যাব সভাপতি বলেন, তাছাড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে বাজার অভিযানের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগও নেয়া হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অধিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়। এসব ব্যবস্থা সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক হয়নি। আর এ সংকটকে পুঁজি করে অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আমদানিকারক, আড়তদার, মজুতদার এবং খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত একমাস ধরে চালের মূল্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইতোমধ্যে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি চাল ঢাকার বাজারে ২/৩ টাকা থেকে ৭/৮ টাকা অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বোরো মৌসুমে কৃষক ধানের উপযুক্ত মূল্য পায়নি। ৭০০/৮০০ টাকা উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে প্রতি মন ধান বিক্রি হয় ৬০০/৬৫০ টাকায়। আমনের মৌসুম এসে গেছে।
২০১৭ সালে বন্যা ও রোগ-বালাই এর কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় খুচরা বাজারে সব ধরণের চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পায়। সে সময়ে সরকারের গুদামেও চালের মজুদ ছিল সামান্য। এবারের অবস্থা ভিন্ন। দেশে উৎপাদিত পর্যাপ্ত চাল আছে। সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টনের অধিক খাদ্যশস্য মজুদ আছে। স্বল্প আয়ের মানুষ তাঁদের মোট ব্যয়ের সিংহভাগ ব্যয় করে চাল ক্রয়ে। চালের দাম বৃদ্ধি পেলে তাঁরা বিপাকে পড়েন। সরকারকে চালের বাজার অস্থিতিশীল করার যে কোন অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
ক্যাব সভাপতি বলেন, পেঁয়াজ ও চাল ছাড়াও পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আগাম শীতকালীন সবজির সরবরাহ প্রচুর থাকলেও দাম বাড়ছে। মাসের শুরুতে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আর ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
দরিদ্র, স্বল্প আয় এবং নিম্মমধ্য বিত্তের ভোক্তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে ১৫ থেকে ২০টি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিহ্নিত করতে হবে। একইসাথে ওই সব পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক ডিভিশন অথবা একটি স্বতন্ত্র ‘ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ সৃষ্টি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কারণ ভারতসহ অনেক দেশেই ভোক্তাস্বার্থ দেখ ভালের জন্য স¦তন্ত্র মন্ত্রণালয় আছে। #