দূরবীন নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। বর্তমান প্রচুর লবণ মজুদ আছে। একটি কুচক্রিমহল লবণ শিল্পকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা আরো বলেছেন, সারাদেরেশ একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী লবণের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এমনকি ইতিমধ্যে কুচক্রিমহলটি সারাদেশে লবণের কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রির অপপ্রচার চালিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সভায় মিল মালিকরা এসব কথা বলেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির নেতা মোতাহেরুল ইসলাম, আফতাব হোসেন, মাষ্টার আব্দুল কাদের, এম কায়সার ইদ্রিস, মো: ফজলুল হক, ওমর ফারুক মিঠু, সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী। সভায় কার্যনির্বাহী সদস্য মো: আবু হানিফ ভূঁইয়া, মো: শহিদুজ্জামান শরিফ, আলহাজ্ব মো: কামাল দেওয়ান, মো: আবুল কালাম আজাদ, হাজি এসএম ইজ্জত আলী, মীর আহম্মদ, সাদেক মোহাম্মদ, এম এ তাহের, গাজী সাব্বির আহমদ, অহিদুস সামাদ হেলাল, মো: কুতুব উদ্দিন, ফরিদুল ইসলাম, শেখ ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, অছিয়র রহমান চেয়ারম্যান, জাফর আহম্মদ, মো: কামাল শরীফসহ সমিতির সদস্য ও দেড় শতাধিক মিল মালিক উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মিল মালিক সভায় সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে ৩ লাখ মেট্রিক টনের ওপরে লবণ উদ্বৃত্ত। কিছু মিল মালিকের কারণে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। বন্ড লাইসেন্স, কাস্টিং সল্ট ইত্যাদি নামে লবণ আমদানি করছিল একটা শ্রেণী। আমাদের কঠোরতায় ওই রকম লবণ আমদানি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
লবণের জাতীয় চাহিদা নিরূপণে সবাইকে এক টেবিলে বসতে হবে। আমরা লবণ ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব। ঘরের সমস্যা ঘরেই সমাধান চাই।
মিল মালিকরা বলেন, আয়োডিনের দাম সর্বোচ্চ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা হওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের কিনতে হচ্ছে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত দামে। আয়োডিনের দাম কমানো প্রয়োজন।
সভায় লবণ মিল মালিক বলেন, কালোবাজারি, উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ও বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় লবণ শিল্প। মাঠে ও মিলে পড়ে রয়েছে অন্তত ছয় লাখ মেট্রিকটন অবিক্রিত লবণ। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কালোবাজারিদের লবণ আমদানির কারণে দেশীয় লবণ খাত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। পিছিয়ে যাচ্ছে দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাত। দরপতন অব্যাহত থাকলে সামনের মৌসুমে লবণ চাষিরা মাঠে যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
লবণ মিল মালিক, ব্যবসায়ী, চাষিসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশীয় লবণশিল্প বাঁচাতে সমস্ত লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে মাঠে ফেরানো যাবে না চাষিদের। পরনির্ভর হবে দেশ। বাড়বে বেকারত্ব। সুডিয়াম সালফেটের আড়ালে যারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট, সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি তাদের কঠোরহস্তে দমন করতে হবে।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে লবণের মৌসুম। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। গেল মৌসুমেও অন্তত ছয় লাখ মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিসিকের চাহিদা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় উৎপাদনযোগ্য লবণ জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। চাষির সংখ্যা ২৯ হাজার ২৮৭ জন। এই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। যা বিগত ৫৮ বছরের লবণ উৎপাদনের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। #