নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির বিহনীন ঘটনা। অতিমাত্রায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের লোভ,ভয়াবহ দুর্নীতি এবং জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক থেকে শেখ পরিবারের প্রভাবশালীদের নামে ৬০ কাঠার প্লট গ্রহণের অভিযোগে একর পর এক দুর্নীতির মামলা দায়ের করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতির মামলা থেকে শেখ পরিবারের কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। কারণ তারা সবাই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সব ধরনের সুবিধাভোগ করেছেন।
সূত্র মতে, রাষ্ট্রীয় সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহনর প্রকল্পে শেখ পরিবারের ৬ জনের নামে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নেওয়া। আর এই অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনাসহ তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি মামলা দায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে গত রোববার (১২ জানুয়ারি) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে ১০ কাঠার প্লট নেওয়ার অভিযোগ প্রথম একটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। ওই মামলায় সহযোগি আসামি করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৬ জনকে।
পরদিন গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১০ কাঠা করে পৃথক ৩টি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার ঘটনায় একই ধরনের অপরাধে অভিযোগে শেখ পরিবারের অরেক ক্ষমতাধর শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও তার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তীর বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা ৩টি দায়ের করা হয়েছে। আর এইসব মামলালয় সহযোগি আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীকে।সেই সাথে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে প্রতিটি মামলায় কমন আসামি করা হয়েছে। এতিকে সোমবার বিকেলে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে এইসব মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যহার রাজউকের ১০ কাঠা করে আরো ২টি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্র শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে পৃথক ২টি মামলা রেকর্ড হবার কথা রয়েছে। এই মামলায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে কমন আসামি করা হচ্ছে।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭নং সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার প্লট নং ১৭ সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে এবং প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মূল অভিযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা গত ২৭ ডিসেম্বর জানিয়েছিল দুদক। দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।
দুদক গত ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। সবগুলোই অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।