আবুল কাশেম, দূরবীণ নিউজ :
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ‘ভ্যাট অনুবিভাগের’ জন্য অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১,৩৬,৮০০ কোটি টাকা আদায়ের। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রার ৯২% অর্জন করেছে ভ্যাট অনুবিভাগ। যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কার্যসম্পাদন মানদন্ড অনুযায়ী ‘অসাধারণ’। গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন, ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
তিনি সোমবার (২৮ আগস্ট) আরও জানিয়েছেন,এনবিআর ভ্যাট আহরণে এবার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেন্জ সত্তে¡ও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জুনে ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১৮%। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ভ্যাটের চূড়ান্ত হিসাবে এনবিআরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭%।২০২১-২০২২ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১১.১৯। তথ্য অনুযায়ী পূর্ববর্তী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে ১৭,০০৪ কোটি টাকা ভ্যাট বেশি আদায় করেছে সংস্থাটি। অর্থবছরে মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১,২৫,৪২৪ কোটি টাকা।এর পূর্বের বছরের আহরণ ছিল ১,০৮,৪২০ কোটি টাকা।
গত জুন মাসের ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের অর্জন লক্ষ্যণীয়। জুন ২০২৩ এর আহরণ হয়েছে ১৫,৬১৪ কোটি টাকা।আগের জুনে এই আদায় ছিল ১৫,০৫৯ কোটি টাকা।জুন মাসের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭.৭০%।
এনবিআরের ভ্যাট উইং এর মাঠ পর্যায়ে ১২ টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে।এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা দক্ষিণ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।অর্থবছরের তাদের অর্জন যথাক্রমে ৩৮.৭১%, ২৪.৭১% এবং ১৯.৮৯%।সর্বোচ্চ ভ্যাট আহরণ করেছে এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট।এই কমিশনারেটের মোট আহরণ হয়েছে ৫৮,৫৬৬ কোটি টাকা।যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৬,১৩৩ কোটি টাকা বেশি।অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৭০% যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৬.৪৬%। গেল অর্থবছরে অনেকটা বিরূপ পরিস্থিতি ছিল।
তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিমালার কারণে বেশ কিছু প্রকল্প থেকে ভ্যাট পাওয়া যায়নি।ব্যাবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এলসি খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি।এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ইউটিলিটি মূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ পরিস্থিতিতে পণ্যের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে মর্মে এনবিআর জানতে পেরেছে।গত অর্থবছরে ভোজ্য তেলসহ কতিপয় পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়।ফলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য থেকেও ভ্যাট পাওয়া যায়নি।
এসব চ্যালেন্জ সত্তে¡ও এনবিআরের ভ্যাটের ১৭% প্রবৃদ্ধি একটি বড় অর্জন হিসেবে মনে করা হয়।এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তিনটে মূল কারণে।প্রথমত, এনবিআর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা; দ্বিতীয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ- উৎপাদ সহগ হালনাগাদকরণ জোরদার; এবং তৃতীয়ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।
তথ্য অনুসারে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আহরণ হয়েছে সিগারেট থেকে।এই আইটেমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩২,৮১৮ কোটি টাকা যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি।এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০%। মোবাইল ফোন অপারেটর্স থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯,৪৩৮ কোটি টাকা।এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১%। কতিপয় আইটেম প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।এর মধ্যে এমএস রড ৫৮.৪৬%, কোমল পানীয় ৩১.১৯%, সিমেন্ট ৩৩.৭২%, বাণিজ্যিক স্থান ভাড়া ২০.১১%। পেট্রোবাংলার গ্যাস ও বিপিসি-র পেট্রোলিয়াম পণ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২১.৬৮% ও ২৩.৪৩%।
প্রচেষ্টা নির্ভর খাতে ভ্যাট উইং ভাল করেছে।এসব খাতে ভ্যাট আহরণ এনবিআর থেকে সরাসরি তদারকি করা হয়।মিষ্টি-তে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮%; আবাসিক হোটেলে হয়েছে ৩৯%।রেস্টুরেন্টে ভ্যাট হার ১৫% থেকে ৫% এ কমিয়ে আনা হয়।তা সত্তে¡ও এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৭৮%।ইটভাটার ভ্যাট আদায়ে মাঠ কর্মকর্তারা তৎপর ছিলেন।ফলে অধিকাংশ ভ্যাট অফিস শতভাগ ভ্যাট আদায় করেছে।
#