দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু এবং দুই হাজারের বেশি নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার ওষুধ ’বিটিআই’ নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ‘বিটিআই’ ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল এগ্রোভেটকে চিঠি দিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মশা মারার কাজে ব্যবহৃত ওষুধে ভাল ফলাফল না পাওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ এবং ঢাকা উত্তর সিটিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রাণঘাতি ডেঙ্গুরোগের জীবাণুবাহি এডিস মশাসহ সবধরনের মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই মেয়র নগরীতে মোবাইল কোর্ট ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ নানা কর্সসূচি পালন করছেন। নির্মাণাধীন ভবনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে মোটা অংকের জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশার উৎপাত এখনও প্রত্যাশিত অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অথচ মশা নিধনের নামে ঢাকার দুই সিটিতেই কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে।
এদিকে ১৬ আগস্ট (বুধবার) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে মশক নিধনে সচেতনতা কার্যক্রম পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, মশা মারার ওষুধ ‘বিটিআই’ নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল এগ্রোভেটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. এ. কে. এম শফিকুর রহমান, উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে: কর্ণেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমদাদুল হক।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মার্শালের এগ্রোভেটের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মার্শাল এগ্রোভেট যেহেতু দাবি করেছে তারা সিঙ্গাপুরের বেস্ট ক্যামিকেলস থেকে ওষুধ এনেছে,এজন্য তাদের কাছে আরও তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে তারা কোন কোম্পানি থেকে এনেছেন এবং কার মাধ্যমে এনেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্ল্যান প্রটেকশন নীতি অনুযায়ী এ বিটিআই যে কেউ আমদানি করতে পারবে। ফলে সবচেয়ে কম দামে যে কোম্পানি পিপিআর দিয়েছে তাদেরই কাজ দেওয়া হয়। আমাদের মাত্র পাঁচ টন বিটিআই আনা হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। তবে আমাদের প্রয়োজন হবে হাজার টন। এটা আনার পরে জাহাঙ্গীরনগর কীটতত্ত¡ বিভাগে পরীক্ষা করা হয়, সেখানে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। পরে ডিএনসিসি ইভ্যুলেশন কমিটি, আইইডিসিআর সবাই এটাকে কার্যকর বলেছে। চাইলে বিটিআই সংগ্রহ করে যে কেউ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে এটা কার্যকর কি না।’
বিটিআই সম্পর্কে মেয়র আরও বলেন, মোহাম্মদপুরে অভিযান শেষে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ডিএনসিসি নগর ভবনে বিটিআই টেস্ট করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। এখন যে টেস্ট করা হলো ৬ ঘন্টার মধ্যে এটির রেজাল্ট পাওয়া যাবে। এর আগে জাহাঙ্গীর নগরের ল্যাবের টেস্টে শতভাগ কার্যকরী রেজাল্ট পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মশা মারতে ডিএনসিসি একটি বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস সেরোটাইপ ইসরায়েলেন্সিস (বিটিআই) নামক কীটনাশক ব্যাকটেরিয়া আনেন। বিটিআই এক ধরনের জৈবিক লার্ভিসাইড যা কার্যকরভাবে মশা ও মাছির লার্ভাকে ধ্বংস করে। এ ধরনের কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধির জলজ আবাসস্থলে এই কীটনাশক প্রয়োগ করলে এটি মশা-মাছির বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। আর বিটিআই ব্যবহারে মানুষ, পোষাপ্রাণি, গবাদি পশু এবং উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি হয় না। # কাশেম