দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
বিকট শব্দে রাজধানীর গুলিস্তান সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ব্যাপক হতাহতের সঠিক কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে সঠিক কারণ উদঘাটনের চেষ্টায় রয়েছেন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে নর্থ সাউথ রোডের ৭ তলা ভবনটিতে বিস্ফোরণে আরো শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এছাড়াও ভবনের ভেতর আরো লোকজন চাপা পড়ে থাকার বিষয়ে অনেকে ধারণা করছেন। বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কেও এখনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে ধারণা নির্ভর তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। ভবনের ভেতর আটকে পড়াদের উদ্ধারে থেমে থেমে অভিযান চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা। দেয়াল ভেঙে এসে পড়ে রাস্তায়। বহু মানুষ উড়ে এসে রাস্তায় পড়েছেন। সড়কে থাকা বহু গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পার্শবর্তী ভবনগুলোও। ভেঙে পড়েছে অনেক ভবনের কাঁচ। বাসযাত্রী থেকে শুরু করে পথচারী পর্যন্ত আশেপাশে থাকা সবাই হতাহত হয়েছেন। ঘটনার পর রিক্সা, ঠেলাগাড়ি, ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সসহ যে যেভাবে পেরেছেন আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েছেন।
এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার টাকা ও গুরুতর আহতদের ২৫ হাজার টাকা এবং বাকিদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহত ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জনের লাশ স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওই ঘটনায় আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বুধবার (৮ মার্চ) এই হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন ১০ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নন। এই ১০ জনের মধ্যে তিনজন আইসিইউতে, দুজন লাইফ সাপোর্টে। বাকিরা আছেন এইচডিইউতে। তাদের কারো শরীরের ৮০ শতাংশ, কারো ৯০ শতাংশ, কারো ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আমরা কাউকে শঙ্কামুক্ত বলতে পারবো না।
অপরদিকে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা গণমাধ্যমকে জনান, এই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। নিহতরা হলেন মো. সুমন (২১), ইসহাক মৃধা (৩৫), মুনসুর হোসেন (৪০), মো. ইসমাইল (৪২), আল আমিন (২৩), রাহাত (১৮), মমিনুল ইসলাম (৩৮), নদী বেগম (৩৬), মাঈন উদ্দিন (৫০), নাজমুল হোসেন (২৫), ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), আকুতি বেগম (৭০), মো. ইদ্রিস (৬০), নুরুল ইসলাম ভূইয়া (৫৫), হৃদয় (২০), সম্রাট (১৮) ও সিয়াম (১৮)।
বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, বিস্ফোরণের পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ইমারতে পরিণত হয়েছে। ভবনের বেজমেন্ট ও নিচতলা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যথেষ্ট সতর্কতা নিয়ে পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজ করছে, তাদেরকে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা সহযোগিতা করছে।
ভবন নির্মাণের ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নেওয়ার আহবান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ভবন নির্মাণের আগে আমরা সবসময় বলে থাকি ফায়ার সার্ভিসে অনুমতি নেওয়ার জন্য। ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণ করলে, এ ধরনের ঘটনা দুর্ঘটনা কমে যেতো বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সিদ্দিকবাজারের ৭তলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় সেখানে সেফটিক ট্যাংক কিংবা গ্যাস লিকেজ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সেসব বিষয় তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন । বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, এরই মধ্যে আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ঢাকা শহরের সুয়ারেজ ও গ্যাস লাইন এবং অনেক পুরাতন বিল্ডিং রয়েছে; এগুলোর কী অবস্থা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। পুলিশের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ জানানো হবে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দ্রæত একটি ওয়ার্কশপ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তারা স্যুয়ারেজ লাইন কিংবা গ্যাসের লাইন কোথায় বিপজ্জনক অবস্থায় আছে সেসব স্থান পরিদর্শন করবে। যাতে করে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।
র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি এটা নিশ্চিত হয়েছি। গত ৮ মার্চ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উদ্ধার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি। র্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমাদের র্যাবের ডগ স্কোয়াড এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এখানে উপস্থিত আছে। তারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এবং রাজউকের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। # কাশেম