নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবশেষে কুখ্যাত প্রতারক ও কথিত ব্যবসায়ী মো. হাসান ছালাম (৪১)কে গ্রেফতার করেছে র্যাব কর্মকর্তারা। তিনি অধিক মুনাফার প্রতিশ্রুতি ও লাখজনক খাতে বিনিয়োগের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং একাধিক ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দীর্ঘদিন যাবৎ আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিসহ বিভিন্ন স্থানে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসার পাশাপাশি ফ্ল্যাট ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা জানান। সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োাজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ না করা ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধ না করায় অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতি মামলায় ২০২০ সালে ছালামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর থেকে তিনি রাজধানীর ডেমরা, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন সময় আত্মগোপনে থাকেন। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতিসহ স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডও দেওয়া হয়। অবশেষে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছালাম রাজধানী ঢাকা ও কুমিল্লায় জেমস্ সুপার শপ লিমিটেড, জেমস্ অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেডসহ যৌথ মালিকানায় মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। দ্রæত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় তিনি একইসময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেন। এতে ভালো মুনাফা হওয়ায় আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে উচ্চহারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নেন। কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য নিয়মিত তাগিদ দিতে থাকলে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চেক দিলেও তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা পাওয়া যায় না এবং ব্যাংক চেক ডিজঅনার করে দেয়। পাওনাদাররা টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকিসহ প্রাণনাশের ভয় দেখাতেন। পরে ভুক্তভোগীরা আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা করেন।
বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও টাকা নেওয়ার কথা জানিয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক,ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইবিএল, প্রাইম ব্যাংক এবং প্রিমিয়াম ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ নেন। প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে তা বন্ধ করে দেন। নিদির্ষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ না করায় এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। পরে আদালতে ঋণ খেলাপির দায়ে মামলা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। মামলাগুলোর শুনানিতে হাজিরাও দেননি ছালাম।
কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য তিনি বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং দোকান বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি ক্রয় করেন। পরে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি পান্থপথে তার অভিজাত ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গা ঢাকা দেন। পলাতক থাকা অবস্থায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বসুন্ধরা সিটিতে জেমস্ সুপারশপের পার্টনারশিপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে গিয়াস উদ্দিন তার কাছে প্রতি মাসের লাভের টাকা চাইলে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করেন। এ অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন তার মূলধন ফেরত চান। এতে হাসান মূলধন ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দেওয়া ও তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে গিয়াস উদ্দিন ছালামের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। ২০২২ সালে হাসান ছালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আদালত। স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে তিনি আলাদা বসবাস করছে বলেও জানান লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। #কাশেম