দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
রাজউকের চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারী জাফর সাদেক চাকরির মাত্র ১৬ বছরেই রাজধানীর আফতাবনগরে ৮ তলা ভবন এবং শান্তিনগরের মেহমান টাওয়ারে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের একটি আধুনিক ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। তিনি রাজউকের পূর্বাচল এস্টেট-২ এর পরিচালকের অফিস সহকারী পদে চাকরি করেন।
২০০৬ সালে তৎকালীন এক মন্ত্রীর জোর সুপারিশে জাফর সাদেক রাজউকের অফিস সহকারী পদে চাকরি পান। এই চাকরির সুবাদে সামান্য বেতনের একজন কর্মচারী রাতারাতি অনেক ক্ষমতাধর হয়েউঠেন। রাজউক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতির পদটিও ভাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রাজউকের বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি।
‘আলাদীনের চেরাগ’ পাওয়ার রুপ কথাকে হারমানিয়েছেন এই জাফর সাদেক। রাজধানীর আফতাবনগরের ডি বøকের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর রোডের ২৯ নম্বরে নূর আহমেদ ভিলা নামের ৮ তলা বাড়িটির মালিক তিনি। এছাড়া শান্তিনগরের মেহমান টাওয়ারে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছে জাফর সাদেকের। আরও জানা যায়, জাফর সাদেক ২০১৫ সালে ৭২ লাখ টাকায় কেনা জমিতে ২০২০ সালে দেড় কোটি টাকা খরচ করে বাড়িটি বানিয়েছেন। এছাড়াও নয়াপল্টনের গাজী শপিং কমপ্লেক্সে দোকান থাকারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুদক উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক সাংবাদিকদের রাজউকের চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত এসব অবৈধ সম্পদের সততা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাজউকের কর্মচারী জাফর সাদেকের বিরুদ্ধে অবাক হবার মতো অনেক তথ্য উপাত্ব বেরিয়ে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে।
দুদক জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, রাজউকের এ কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবৈধ প্লট বিক্রি, লোকজনের বিভিন্ন ভবনের নকশা পাস ও অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার নামে মোটা অংকের ঘুষ আদায়সহ নানা কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি এসব অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৪ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম রাজউক ভবন, শান্তিনগর ও আফতাবনগরে জাফর সাদেকের ৮ তলা ভবনে অভিযান চালিয়েছে।
এটা শুধু অভিযোগ নয়, দুদক টিমের সদস্যরা সরেজমিন অভিযানেও প্রাপ্ত অভিযোগে অনেক তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন। তবে ২৪ জানুয়ারি দুদকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আগে-ভাগেই পালিয়ে যান রাজউক কর্মচারী জাফর সাদেক। এমনকি বারবার ফোন করেও তাকে পাননি দুদক টিমের সদস্যরা।
দুদক কর্মকর্তা আরও বলেন, অভিযান পরিচালনাকালে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি। এমনকি জাফর সাদেকের সহকর্মীরাও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। অভিযোগে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে টিম উক্ত ব্যক্তির অবৈধ সম্পদের সন্ধানে আফতাবনগর ও শান্তিনগরে গেলে উক্ত স্থানগুলোতে তার সম্পদের অস্তিত্ব থাকার প্রাথমিক সত্যতা পায়। এছাড়া আশেপাশের স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পদশালী বলে টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
এদিকে দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে জাফর সাদেক রাজউকের অফিস সহকারী পদে চাকরির পাশাপাশি রাজউকের প্লট বিক্রি, নকশা পাস করিয়ে দেওয়ার অবৈধ বাণিজ্যে জড়িত হন তিনি। আর এসব কাজ করেই তিনি আজ রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জাফর সাদেক বর্তমানে পূর্বাচল এস্টেট-২ এর পরিচালকের অফিস সহকারীর দায়িত্বে রয়েছেন। তবে তিনি অফিস করেন না। রাজউক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতিও তিনি।
এর আগে স¤প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ থেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। ওই সময়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমে বলেন, ‘রাজউকের অনেক ফাইল গায়েব হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছিল। আবার জিডিও আছে। মামলা ও জিডির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ডেকেছিলাম। পরবর্তী পর্যায়ে এ বিষয়ে আরও কথা বলবো। তাকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’ #কাশেম