দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, অবৈধ উপায়ে ধন-সম্পদ অর্জনের লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে।দুর্নীতি হচ্ছে সামগ্রিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, যা একটি জাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, আগে এদেশের মানুষ সুদখোর,ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের ঘৃণার চোখে দেখতো। কিন্তু এখন মানুষ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছেন। আসুন আমরা দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করি। দুর্নীতিবাজরা জাতি ও রাষ্ট্র বিরোধী। তারা রাষ্ট্রের উন্নয়ন বিরোধী।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুদক আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক মিডিয়া অ্যায়ার্ড-২০১৯ এর বিজয়ী ৬ সাংবাদিকের হাতে ক্যাষ্ট, সনদ এবং সম্মানী তুলে দেন প্রধান বিচারপতি। এরমধ্যে বৈশাখী টেলিভিশনের কাজী ফরিদ আহমেদ (নির্বাচনী প্রশিক্ষণে অনিয়ম), ৭১ টেলিভিশনের ইমরান হোসেন (ব্যাপক দুর্নীতি বরগুনা জেলা পরিষদে) , চ্যানেল ২৪ এর আশিকুর রহমান শ্রাবন ( জাতীয় পরিচয়পত্র গোপন করে রোহিঙ্গা সাজা কিছু বাংলাদেশী)।
দৈনিক দেশ রুপান্তরের তোফাজ্জাল হোসেন রুবেল ( কেনা তোলায় এত কাজ), দ্যা ডেইলী স্টারের মোহাম্মদ জামিল খান ( Yaba Charity hand in glove. )
প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম (দরপত্র ছাড়াই কেনা কাটা অধিকাংশই অস্তিত্বহীন) ।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভিডিওসহ রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়। । অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, জহুরুল হক ও দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, স্বাধীনতাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গর্ব, দুর্নীতি এই গর্বের জায়গাকে আঘাত করে। দুর্নীতি মানুষের সেবার মান ভঙ্গুর করে দেয়। আবার অর্থের প্রতি লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। দুর্নীতি হচ্ছে সামগ্রিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, যা একটি জাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন,এই দেশ স্বাধীন হয়েছে একটি সুখী সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে। কেউ দুর্নীতি করবে, দেশের টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে জমাবে, সেজন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনও চলছে।
বিচারপতি শৈশবের উদাহরণ টেনে বলেন, আমরা যারা ষাটোর্ধ্ব তারা জানি, আগে বর্ষাকালে কাদার মধ্যে যখন গরু বেঁধে রাখতো, তখন গরুর পায়ে পোকা জন্মাতো। আমাদের মামা-দাদিরা তখন কাগজে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোরদের নাম লিখে গুরুর গলায় ঝুঁলিয়ে দিত। তখন ঘৃণা ভরে গরুর পোকা পা থেকে চলে যেত। এভাবে সুদখোর ও দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করা হতো। এখন আমরা দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছি। আসুন আমরা দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করি। কারণ দুর্নীতিবাজরা জাতি বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন বিরোধী। আসুন আমরা তাদের ঘৃণা করতে শিখি।
তিনি বলেন, আমি দুর্নীতিবাজদের অনুরোধ করে বলব, আপনারা তুলনা করে দেখেন। যারা অবৈধ সম্পদ গড়েছেন, আর যারা কষ্ট করে সৎভাবে সংসার চালিয়েছেন, তারা নিজেরাই দেখেন কাদের সন্তান মানুষ হয়েছে। আপনার দেখুন নিজেদের অবস্থানটা কোথায়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনো মানুষই দুর্নীতিবাজ হয়ে জন্মায় না। তারা জন্মের পর পরবর্তীতে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। ধন-সম্পদ অর্জনের লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারে যুব সমাজ, দুর্নীতিবাজদের বিবেক আর দুর্নীতিবিরোধী আইনের যথাযথ ও নিরপেক্ষ ব্যবহার। এছাড়া আইনের প্রয়োগ এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক সময়োপযোগী আইনি ব্যবস্থা। দুর্নীতি এক ভয়াবহ ব্যাধি, এই ব্যাধি থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যতই শক্তিশালী হোক, তার দুর্নীতি শনাক্ত করতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব’। দিবসটি উপলক্ষে নতুন সাজে সেজেছে দুদক। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে অফিস ভবন, মিডিয়া সেন্টার ও অফিসের পেছনের গেটজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও দুর্নীতি বিরাজমান। এতে প্রতীয়মান হয় যে মানুষ অভাবে নয় বরং লোভ ও স্বভাবগতভাবেই দুর্নীতি করে থাকে। যারা দুর্নীতি করে তাদের মধ্যে কোনো দেশপ্রেম আছে বলে দুদক মনে করে না। সামান্যতম দেশপ্রেম থাকলে তার পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব না। দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় না, দেশকে পিছিয়ে নেওয়া যায়। যারা দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার কাজে জড়িত তারা কীভাবে দেশ প্রেমিক হতে পারে? একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই দুর্নীতিবাজ।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, একসময় দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে সমাজে বয়কট করা হতো। কিন্তু এখন মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ হয় অর্থের মাপকাঠিতে। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না এমন ধারণা সৃষ্টি করতে দুদক সারাদেশে ৫০২টি কমিটি করে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে সকালে বেলুন উড়িয়ে ২০তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্বোধন করা হয়। এরপর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো অংশ নেন। # কাশেম