দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
প্রভাব খাঁটিয়ে সলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড থেকে এস আলম গ্রæপসহ পৃথক চার প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
ফলে হাইকোর্ট ব্যাংকের এ অর্থ কোথায়, কি অবস্থায় আছে এবং এ অর্থ পাচার হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে (অনুসন্ধান) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। উচ্চ আদালত আগামী চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের বলেছেন।
আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), দুদক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। অনুসন্ধানে কিছু পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও জানাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বছরের ৫ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
হাইকোর্ট এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে এস আলম গ্রæপের চেয়ারম্যানকে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলা ও ইংরেজি পৃথক তিনটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর সেটি আমলে নিয়ে রোববার (৪ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বে স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ শিরোনামে গত ২৪ নভেম্বর প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ইসলামী ব্যাংকের ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ঋণের তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক শিরোনামে গত ২৯ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে এবং এস আলম গ্রæপ একাই আইবিবিএল থেকে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ঋণ তুলেছে শিরোনামে গত ৩০ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক নিউএজে পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পৃথক প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসে।
আদালতে রোববার দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানিতে ছিলেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ওঠা অভিযোগের সত্যতা বিষয়ে এবং ঋণ নেওয়া সংক্রান্ত নথি আদালতে দাখিল করতে এস আলম গ্রæপের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ঋণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের নামের তালিকা আদালতে দাখিল করতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রুলে অভিযোগে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। অর্থসচিব, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ ও সিআইডিসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র। সব মিলিয়ে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেওয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নভেম্বর। যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ জন্যই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা চলতি মাসকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ বলে অভিহিত করছেন।
একইভাবে বেসরকারি খাতের এসআইবিএল ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে এ কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেওয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার সংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়। ব্যাংক তিনটির নথিপত্র পর্যালোচনা করে এ সব তথ্য মিলেছে।
ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভাষ্য— এ বছর ৯ প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের মাধ্যমে বড় আকারে ব্যাংকিং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু বাংলাদেশ ব্যাংক। #