দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
আগামী ২ মাসের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের গ্রহণ করা টানা ১৩ বছরের বেতন,ভাতাসহ নানা সুযোগ সুবিধার বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১৩ বছরে ঢাকা ওয়াসার কি অর্জন ও সাফল্য রয়েছে তাকসিম এ খানের। উচ্চ আদালত আগামী ২ মাসের মধ্যে ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের (বোর্ডের) চেয়ারম্যানকে হলফনামা আকারে বিস্তারিত প্রতিবেদনসহ দাখিল করতে বলেছেন।
হাইকোর্ট ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের গ্রহণ করা বেতন ,ভাতা, সুযোগ সুবিধা,পদ মর্যাদা এবং তার দায়িত্ব কর্তব্যসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে জবাব চেয়ে একাধিক রুল জারি করেছেন। উচ্চ আদালতের জারি করা রুলে উল্লেখ করা হয়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে গত ১৩ বছর ধরে তিনি কত টাকা বেতন, বোনাস ও অন্যান্য সুবিধাদি নিয়েছেন। ঢাকা ওয়াসার এমডিকে অপসারণে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাকে অপসারণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (১৭ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হকের বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ জারি করেন।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
রিটকারী আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আদালত তার নির্দেশনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার পর গত ১৩ বছরে তাকসিম এ খান মোট কত টাকা বেতন, উৎসাহ ভাতা, টিএডিএসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তার হিসাব চেয়েছেন হাইকোর্ট। এই হিসাব আগামী ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১ জুলাই বা তার পর যারা সরকারি, স্বশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানসহ প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন বেসামরিক পদে জনস্বার্থে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবে তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেলের বিধান কার্যকর হবে।
পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন-১৯৯৬ সালের ২৮(৪) উপ-ধারা অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের এখতিয়ার আছে, তার বেতন ও অন্যান্য ভাতা নির্ধারণ করার। কিন্তু সেটি করার জন্য কোনো নীতিমালা নেই। সে ক্ষেত্রে সরকারের ২০১৬ সালের সার্কুলার ও জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ীই তার বেতন-ভাতা নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু তাকসিম এ খানের বেতন-ভাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি।
রিটে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে তিন বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ পান। তখন তার সর্বমোট মাসিক বেতন ছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ছিল ৬০ হাজার টাকা। অন্যান্য খাতের মধ্যে বাড়িভাড়া ২০ হাজার, উৎসব ভাতা ১০ হাজার, মেডিকেল ও বিনোদন ভাতা চার হাজার এবং বিশেষ ভাতা ২২ হাজার টাকা। তার সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল, বেতন বাবদ প্রদেয় আয়কর তাকসিম এ খানকেই দিতে হবে। এরপর ২০১০ সালে ওয়াসার এমডির বেতন দুই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ওয়াসা বোর্ডের ২৩১তম সভায় এমডির বেতন নির্ধারণ করা হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। একলাফে এমডির বেতন বাড়ে আড়াই লাখ টাকা, যা কার্যকর হয় ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে।
পরে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭২তম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বরে। ওই সভায় এমডির পারিশ্রমিকসহ সুযোগ-সুবিধা, বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানী পুনর্র্নিধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি দুই দফায় বৈঠক করে এমডির বেতন-ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করে।
গত বছরের ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭৬তম সভায় কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমডির বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার মূল বেতন দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা। উৎসব ভাতা ৪৭ হাজার ৬৬৭ টাকা, বাড়িভাড়া ৩৫ হাজার, চিকিৎসা ও আপ্যায়ন ভাতা ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা, বিশেষ ভাতা এক লাখ ৮০ হাজার ৬৬ টাকা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা চার হাজার ৭৬৭ টাকা।
এ খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে গত ২০ মার্চ বিবাদীদের লিগ্যাল নোটিশ দেয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। নোটিশের পরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট। #