দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি এবার কাগজে-কলমে বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছেন । তিনি হাইকোর্ট, বিচার বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ‘তার এবং তার সমর্থনকারীদের ওপর হামলার সঠিক তদন্ত করে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। কেন আমাদের উপর আঘাত করা হয়েছে তার সঠিক বিচার চাই।’
২১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহবাগ চত্বর ত্যাগকালে তিনি এসব কথা জানান। এর আগে রাত ৮টার দিকে কমলাপুর ত্যাগ করে শাহবাগে অবস্থান নেন এই শিক্ষার্থী। রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী।
রনি আরো জানান, ‘আমার সহপাঠিদের উপর হামলা করে রেলওয়ে পুলিশ ও আনসার বাহিনী ভুল করেছে। আমি শান্তিপূর্ণভাবে আমার দাবিগুলো উত্থাপন করছিলাম। আমাকে কেন স্টেশনে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছিল, তা তারাই ভালো জানেন। যেহেতু আমাকে সমর্থন করতে এসে হামলার শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা, সেহেতু এখন থেকে আমি স্টেশনের পাশাপাশি কগজে-কলমে আইনের লড়াইও চালিয়ে যাব।’
এর আগে সন্ধ্যায় রনি সারা দেশের শিক্ষার্থীদের পাশে চেয়ে বলেন, ‘টিকিট কাটতে যাত্রী হয়রানি, টিকিট কালোবাজারি বন্ধসহ ছয় দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। শুক্রবার থেকে দেশের সব স্টেশনে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করবে। কেউ না এগিয়ে এলে আমি একাই আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী বৃস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল রনির। এ সময় তার প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি দল স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে রনিসহ তারা বাধার সম্মুখীন হয়। একপর্যায়ে রেলওয়ে পুলিশ তাদের ওপর চওড়া হলে রনিসহ কয়েকজন আহত হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
এর কিছুক্ষণপর অবশ্য কমলাপুর স্টেশনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এ সময় তারা সকল অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ ছাড়া গানের মাধ্যমেও প্রতিবাদ জানায় তারা। তার কিছুক্ষণপর কমলাপুর ত্যাগ করে শাহবাগে অবস্থান নেন রনি। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর আগামীকাল (শুক্রবার) পুনরায় কমলাপুর অবস্থান করবে জানিয়ে শাহবাগ চত্বর ত্যাগ করেন রনি।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই থেকে রনি একাই প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন রেলের দুর্নীতি, অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে। তবে সময়ের সাথে সাথে সাধারণ যাত্রীদের সমর্থন পান তিনি।
গত ২০ জুলাই (বুধবার) ঢাবি শিক্ষার্থী রনির অভিযোগের ভিত্তিতে টিকিট কাটতে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ‘সহজ ডটকমকে’ দু’লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর।
তার আগের দিন রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিরসনে ছয় দফা দাবিতে রেল ভবনে স্মারকলিপি দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারকে ওই স্মারকলিপি দেন তিনি।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ছয়টি দাবি :
টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ.কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি হয়রানির ঘটনায় তদন্ত-পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১) যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।
২) অনলাইন-অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৩) যাত্রী চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৪) ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর ছাড়াও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে।
৫) তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
৬) ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।