দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কারাদন্ডপ্রাপ্ত ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর সাকিবুজ্জামান খানসহ (অব.) ৪ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিশেষ জজ আদালত। অপর তিন আসামি হলেন- ডেসটিনি গ্রæপের প্রতিষ্ঠান বেস্ট এভিয়েশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোল্লা আল আমিন, হেড অব ফাইন্যান্স কাজী মোহাম্মদ ফজলুর করিম ও সুনীল বরণ কর্মকার।
বুধবার (২৯ জুন) ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১২ মে দুদকের করা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম।
বিচারিক আদালতের রায়ে মেজর সাকিবুজ্জামান খানের (অব.) পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানা মোল্লা আল আমিনের চার বছর কারাদন্ডও ১০ লাখ জরিমানা, কাজী মোহাম্মদ ফজলুর করিমের পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও ৫০ লাখ জরিমানা এবং সুনীল বরমণ কর্মকারের ৮ বছর কারাদন্ড ও ৫ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
রায় ঘোষণার সময় এ চার আসামী পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আদালতের রায়ে ডেসটিনি গ্রæপের এমডি রফিকুল আমীনের ১২ বছরের কারাদন্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ২০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
ডেসটিনি গ্রæপের চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদের চার বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। কারাদন্ডের পাশাপাশি তাকে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ডে আদেশ দেন বিচারিক আদালত। মামলার বাকি ৪৩ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা করেছিলেন।
২০১৪ সালের ৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মোজাহার আলী সরদার। এতে ডেসটিনির গ্রাহকদের ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলায়ই আসামি হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল এক হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন। ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়।
এর মধ্যে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। চার্জশিটে আরও বলা হয়, ডেসটিনি গ্রæপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন। এরপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এমন ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। #