দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার দুই বিঘা জমি রক্ষা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত একই সঙ্গে ’স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার’ ওই দুই বিঘা জমি গ্রাস করতে আসা ‘কনকর্ড ডেভেলপার কোম্পানির’ রিভিউ আবেদনটিও খারিজ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) কনকর্ড ডেভেলপার কোম্পানির রিভিউ (পুর্বিবেচনার) আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির সমন্বয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ বৃহস্পতিবার ‘স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার ‘সম্পত্তি রক্ষায় করা রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এছাড়াও এতিমখানার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ ওয়াই মসিউজ্জামান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম।
অপরদিকে, কনকর্ড ডেভেলপার কোম্পানির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং অ্যাডভোকেট এমএ হান্নান।
গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কনকর্ডের তৈরি ১৮তলা ভবন ওই এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে কনকর্ডের ১৮তলা ভবন এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কনকর্ডের করা আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের (অবসর প্রাপ্ত) নেতৃত্বে তিন সদস্যর আপিল বিভাগের বেঞ্চ ওই রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন করেন কনকর্ড ডেভেলপার কোম্পানি। সেটি আজ খারিজ হয়ে গেলো। ফলে এখন ওই সম্পত্তি এতিমখানারই থাকছে।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এতিম খানার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ ওয়াই মশিউজ্জামান ও ব্যারিস্টার অনিক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ওইদিন বলেন, কনকর্ডের লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় যত দ্রুত সম্ভব স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানাকে ওই ভবন বুঝিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, এতিমখানার সম্পত্তি সরকারের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। এতিমখানার গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, এতিম খানার কাজের বাইরে এই জায়গা ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সেসময় যারা কমিটিতে ছিলেন তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এ সম্পত্তির ৬৫ ভাগ কনকর্ডকে দিয়েছিলেন আর এতিমখানাকে দিয়েছিলেন ৩৫ ভাগ। চুক্তি করার কোনো ক্ষমতাই ছিল না সেই কমিটির। আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না।
২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে জারি করা এক রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জায়গায় আবাসন প্রতিষ্ঠান কনকর্ডের তৈরি ১৮তলা বিল্ডিং এতিমখানাকে হস্তান্তরের আদেশ দেন। একই সঙ্গে চার দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে আবাসন প্রতিষ্ঠান কনকর্ড। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালত ২২ সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
২০০৩ সালের ২২ জুলাই এতিমখানার সভাপতি শামসুন্নাহার ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জি এ খান আহসান উল্লাহ এতিমখানার দুই বিঘা জমি ডেভলপার কোম্পানি কনকর্ডের কাছে হস্তান্তর করেন। এতিমখানার সম্পত্তি অবৈধ হস্তান্তর সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পায়। পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর তা সংযুক্ত করে চারজন ছাত্রের পক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করেন মনজিল মোরসেদ। পরে ওই রিট পিটিশনে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষভুক্ত হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, এতিমখানার সম্পত্তি সরকারে নিকট থেকে লিজ নেওয়া এবং লিজ চুক্তিতে এতিমখানা সম্প্রসারণের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া হয়। শর্ত ছিল প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোনো কাজে জমি ব্যবহার করা যাবে না। তারপরও এতিমখানার সভাপতি ও সেক্রেটারি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হয়ে এতিমখানার সম্পত্তি কনকর্ড গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। #