দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
প্রায় ১১ শত কোটি টাকার অনিয়ম ও সরকারের ক্ষতিসাধণের অভিযোগ শুধু ‘ইজিপ্ট এয়ারের (মিশর) দুটি উড়োজাহাজের ইজারাতেই। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করতে বিমান বাংলাদেশএয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বলাকায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম।

বুধবার (১ জুন) বেলা ১১টায় দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনে নেতৃত্বে একটি টিম হযরত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলাকা অফিসে হানা দিয়েছে। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ সাদেক।তিনি বলেন, অনিয়ম সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করতেই সেখানে গেছেন।

সূত্র মতে, গত ২৪ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিশরীয় উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ দুদকের মাধ্যমে তদন্তের জন্য কার্যবিবরণীর অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।

এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ বিষয়টি নিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। গত ২৮ মে দুদক টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ বিমানের কাছে ১৩ ধরনের নথিপত্র তলব করছে।

২০১৪ সালে ৫ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। ২০১৪ সালের মার্চে একটি এবং মে মাসে আরেকটি বিমান। কিন্তু ২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ওই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। পরে এ ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এসব করে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে কয়েক ১১ শত কোটি টাকা।

ইজিপ্ট এয়ার কর্তৃক রিপোর্ট অব ফিজিক্যাল ইন্সপেকশন অব টু ৭৭৭-২০০ ইআর এয়াক্রাফট শীর্ষক পরিদর্শন প্রতিবেদনের ছায়ালিপি। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর ওই বিমান লিজ গ্রহণের জন্য গঠিত টিম, তাদের আদেশ ও এ সংক্রান্ত নথির ছায়ালিপি, ২০০৯ সালের ১১ জুনে অনুষ্ঠিত ফ্লাইট দুদকের চিঠিতে চাওয়া হয়েছে, বিমান প্ল্যানিং কমিটির লিজ গ্রহণ সংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্তের ছায়ালিপি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ক্রয় নীতিমালা ও আর্থিক কার্যক্রমের সত্যায়িত ছায়ালিপি, বিমান লিজ গ্রহণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নথি, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ও নোটসহ পূর্ণাঙ্গ নথি, লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র ও বিজ্ঞপ্তি কোন কোন পত্রিকায় এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে কিনা তার রেকর্ডপত্র, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির প্রতিবেদন ও দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলোর তালিকা, লিজ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে এয়ারক্রাফট ২টি লিজ গ্রহণ এবং ফেরত দেওয়া পর্যন্ত যাবতীয় ব্যয়ের বিল-ভাউচার, রেজিস্ট্রার, ব্যাংক হিসাব বিবরণী, মুড অব ট্রান্সজেকশন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়াালিপি, এয়ারক্রাফট লিজ গ্রহণের উদ্দেশ্যে গঠিত ইন্সপেকশন টিম সদস্যদের নাম, পদবি ও বর্তমান ঠিকানাসহ তালিকা, তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ছায়ালিপি, পাসপোর্টের প্রথম ২ পৃষ্ঠার ফটোকপি এবং মিশরে অবস্থান সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি, এয়ারক্রাফট দুটির বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যাদি, বিমানের ৩টা চেক (এ.সি.ডি) সংক্রান্ত নিয়মাবলী বা নির্দেশিকা সংক্রান্ত ছায়ালিপি এবং এয়ারক্রাফট উড্ডয়নের সক্ষমতা, যোগ্যতা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিয়মাবলী বা নির্দেশিকা।

এদিকে বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত বিমান এয়ারলাইন্সেট ট্র্রেনিং সেন্টার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, দুদকের টিমকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।বিমান ইজারায় অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের পর সংসদীয় কমিটি থেকে দুদকে পাঠানো হয়েছে। এরপর দুদক টিম আসছে, তাদেরকে নির্বিঘেœ কাজ করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং এয়ার কমোডর ড. মো. মাহবুব জাহান খান বলেন, বিমানের ফ্লাইট সংক্রান্ত ডকুমেন্টগুলো আমরা দেখি।

আজ দুদকের টিম এসেছে। সব তথ্য সংরক্ষিত করা আছে। আমি ২০১৮ সালে জয়েন করেছি। তিনি বলেন, ‌২০১৮ সালের আগে আরও কয়েকবার তদন্ত হয়েছে। ইজিপ্টের দুটি বিমান ভিয়েতনামের বিমানবন্দরে আছে। সেখান থেকে ঠিক করে ফেরত দেওয়ার কথা। এই জটিলতার মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমিসহ একটি টিম মিশরে গিয়ে ছিলাম। বিশেষ করে ফেরত দেওয়ার জন্য আলোচনায় আমি ছিলাম।