দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
সবমামলায় আদালত থেকে জামিনের পর দেশের আলোচিত ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট টানা ৩২ মাস পর ঢাকা কেন্দ্রীয় গারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাসহ পৃথক ৪টি মামলায় টানা ৩২ মাস কারাগারে আছেন তিনি।

বুধবার (১১ মে) বিকেলে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরআগে আজই দুদকের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান শুনানি শেষে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

তার আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল গণমাধ্যমকে জানান, সম্রাটের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। ইতোমধ্যে অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচারের মামলায় জামিন হয়েছে। তবে দুদকের মামলায় তিনি কারাগারে আছেন।

তার বিরুদ্ধে ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক রাশেদুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলা (মামলা নম্বর ১৪) করেন। সম্রাট তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের মাধ্যমে ১৯৫ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির মামলায় উল্লেখ, ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত আসামী সম্রাট সিঙ্গাপুরে ৩৫ বার, মালয়েশিয়ায় ৩ বার, দুবাইতে ২বার এবং হংকংয়ে একবার ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া তার সহযোগী এনামুল হক আরমান ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মে পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ২৩ বার ভ্রমণ করেছেন। সম্রাট ও আরমান অবৈধ অর্থ দিয়ে যৌথভাবে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে আরমানকেও গ্রেফতার করে র‌্যাব।

৬ অক্টোবর দুপুরে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্ব একটি দল কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে। এ কার্যালয়ে পশুর চামড়া রাখার দায়ে তার ৬ মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

আরও জানা যায়, বুধবার (১১ মে) বিকেল ৩টায় কেরানীগঞ্জে স্থাপিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সম্রাটের পৃথক ৪ মামলায় আদালতে জামিনের কাগজ পৌঁছেছে। ফলে দ্রুত কারাগার মুক্তির জন্য নথিপত্রে সই স্বাক্ষর করেন কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় কাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

তিনি আরও জানান, এখন নিয়ম অনুযায়ী জামিনের কাগজ পাঠানো হবে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। কারণ ওই হাসপাতালে কারাকর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে তিনি চিকিৎসাধীণ রয়েছেন।
জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগে থেকেই চিকিৎসকদের পরামর্শে বিএসএমএমইউয়ের ডি-ব্লকের সিসিইউতে আছেন আসামী সম্রাট। সেখানে পুলিশের পাশাপাশি কারারক্ষীদের প্রহরায় আছেন তিনি।

১১ মে সকালে সম্রাটকে বিএসএমএমইউ থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর জামিন শুনানি শেষে ফের তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। ৩ শর্তে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় আগামী ৯ জুন পর্যন্ত আসামী সম্রাটের জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়। শর্তসমূহ হলো- আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না। আদালতে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে এবং স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার প্রতিবেদন আগামী ধার্য তারিখে জমা দিতে হবে।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল গণমাধ্যমকে বলেন, বুধবার (১১ মে) দুদকের মামলায় সম্রাটের অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। সম্রাটের আইনজীবী বিদেশে থাকায় অভিযোগ গঠন শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করেন। এছাড়া সম্রাটের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। দুদকের পক্ষে আমরা জামিনের বিরোধিতা করি। আদালত মানবিক কারণে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

দুদকের মামলায় ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
#