দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক হাইকমিশনার মো. খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ,নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ টাকা আত্মসাতের সুনিদিষ্ট অভিযোগে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের কমিশন এক সভায় সাবেক হাইকমিশনার মো. খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি দুদকের অনুসন্ধাকারী কর্মকর্তা মামলাটি দায়েরর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে যে কোন সময় মো. খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হতে পারে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুদকের ঊর্ধ্বতন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্র মতে, অভিযুক্ত মো. খায়রুজ্জামান ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. মনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বিভাগীয় তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মো. খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় সরাসরি মামলা অনুমোদন দেয় কমিশন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুরোধেই চলতি বছরের ফেব্রæয়ারিতে সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়া পুলিশ গ্রেফতার করে। এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় ৪ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামান ওই জেলহত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
তবে পরে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সামরিক কর্মকর্তা এম খায়রুজ্জামান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেল হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে খায়রুজ্জামানের নাম চলে আসে। ওই সময় ফিলিপিন্সের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা খায়রুজ্জামানকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়। ওই ১৯৯৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেফতার করে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে জামিনে মুক্তি পান খায়রুজ্জামান। ২০০৩ সালের ৪ মে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে একটি আদালত জেল হত্যা মামলা থেকে খায়রুজ্জামানকে অব্যাহতি দেন। পরে তত্ত¡বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে হাইকমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় গ্রহণের পর খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং মালয়েশিয়ায়ই থেকে যান। #