দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় একটি তিনতলা বাড়ি ক্রয়ের অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রও দুদকের হাতে এসেছে।
এস কে সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহাকে ব্যবহার করে তিনি ( এস কে সিনহা) বাড়ি কেনার অর্থ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাচার করেছেন। এমন অভিযোগের রেকর্ডপত্র উদ্ধার করেছে দুদক। দুদকের একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২৭ মার্চ) দুদকের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ যাচাইয়ে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিংগাপুরসহ বিভিন্ন দেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সম্পদের তথ্যের জন্য চিঠি দেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান।
ওই চিঠির জবাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার তিনতলা বাড়ি ক্রয়ের তথ্য পায় দুদক। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।এ বিষয়ে তদারককারী কর্মকর্তা ও দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা হয়েছে। তবে মামলার অনুমোদন এখনো হয়নি।
দুদক মতে, এস কে সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা আমেরিকায় একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। আমেরিকার একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেন তিনি। ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার নগদ অর্থ দিয়ে আরেকটি বাড়িটি ক্রয় করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত নিউজার্সির প্যাটারসনে অবস্থিত ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমার সিনহার অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। এছাড়া একই অ্যাকাউন্টে পৃথক উৎস থেকে ওই বছরের ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৬০ হাজার ১০ ডলার জমা হয়। এসব ডলার ইন্দোনেশিয়া ও কানাডার রয় গ্রæপের কাছ থেকে পাওয়া, যা প্রকৃতপক্ষে একটি সেল কোম্পানি। অনন্ত কুমার সিনহা বড় ভাই সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে ওই সময় ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে যান। তখন তিনি (এসকে সিনহা) ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি ক্রয়ের জন্য বন্ধুর কাছ থেকে তিনি ফান্ড পেয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষে এস কে সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ অর্থ অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় যুক্তরাষ্ট্র্রে পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। এসব অর্থ দিয়ে ১৭৯ জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি ০৭৫২২- তে ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার খরচ করে একটি বাড়ি ক্রয় করেন। সুতরাং বাড়িটি পরোক্ষভাবে এস কে সিনহারই।
তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ভোগ দখলে রেখে এবং অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান গোপন করে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পাচার করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচারের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন বিচারিক আদালত। এর মধ্যে ঋণ জালিয়াতির মামলায় চার বছর এবং অর্থ পাচারের মামলায় সাত বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন বিশেষ জজ আদালত।
২০১৯ সালের ১০ জুলাই ও ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জন আসামির আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হযয়। বাকি দুইজনকে খালাস দেয়া হয়।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের প্লটট বরাদ্দ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করে দুদক। ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার সম্পদ তিনি বেনামে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে মামলায় রাজউকের কোনো কর্মকর্তাকে আসামী করা হয়নি। ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। #