দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের ১৩টি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন। র ২০ ফেব্রুয়ারি দুদকের কনফারেন্স রুমে মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের বিষয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এসব অভিযোগের তথ্য উপস্থাপন করেন তিনি। প্রায় এক ঘন্টা সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের মুখে তিনি ব্যাখা প্রদান করেন।
দুদক সচিব বলেন, কমিশন প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে শরীফ উদ্দিনকে ৫৪ (২) বিধিমতে অপসারণ করা হয়েছে। কমিশনের সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অপসারণের আদেশ জারির পর থেকেই বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একতরফা তথ্যের ভিত্তিতেই বিভ্রান্তমূলক সংবাদসমূহ প্রচারিত হচ্ছে। শরীফ উদ্দিন অনেক দিন থেকেই চাকরির নিয়মনীতি অমান্য করেছে। যারফলে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে অপসারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদক সচিব বলেন, আপনাদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, দুর্নীতি দমন কমিশন কোন প্রভাব আমলে নেয় না এবং প্রভাবিত হয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। মিডিয়া সংশ্লিষ্টগণ এবং অনেকেই মো.শরীফ উদ্দিনের অপসারণের প্রকৃত ঘটনা জানানোর জন্য অনুরোধ করায় আজ আমরা এ বিষয়ে আপনাদের অবহিত করছি। শরীফ উদ্দিনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বহ অভিযোগ কমিশনে থাকায় তাকে অপসারণ করতে হয়েছে।
সচিব বলেন, কর্মচারীদের অসদাচরণ ও অন্যান্য অপরাধের জন্য শৃঙ্খলা এবং আচরণ বিধি রয়েছে। শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের আদেশ জারির পর থেকেই বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়একতরফা তথ্যের ভিত্তিতেই সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, যা প্রকৃত ঘটনার বিপরীত। অপসারণকৃত উপ-সহকারী পরিচালক মো.শরীফ উদ্দিন দায়িত্ব পালনকালে যে কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। গুরুত্বপূর্ণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ যাই হোক না কেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত সব কর্মচারীই নির্ভয়ে এবং নির্মোহভাবে দায়িত্বপালন করেন। কিন্তু শরীফ উদ্দিনের মতো কোনো অজুহাত তারা উত্থাপন করেন না।
দুদক সচিব বলেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতি উদ্ঘাটনের কারণে তাদের প্রভাবে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে এটা মোটেও সত্য নয়। বাস্তবতা বিবেচনায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কর্মরত জেলা পর্যায়ের ব্যক্তিদের আর কতটুকুই বা প্রভাব থাকতে পারে! কমিশনের প্রায় সব অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মচারী চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট মামলায় উল্লিখিত অভিযুক্ত বা আসামিদের অপেক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ উঁচু পদ-পদবির ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে বিচারের পর তাদের সাজাও হযেছে। কিন্তু তারা কেউ এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেননি। তাদের কারণে কমিশনকে এভাবে বিব্রত হতে হয় না।
দুদক সচিব আরও বলেন, শরীফ উদ্দিন কোন অনুসন্ধান বা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া মাত্র দুদকের নির্দেশিকা অনুসরণ না করে নিজের খেয়ালখুশি মত কার্য পরিচালনা করতেন। অনুসন্ধান বা তদন্তকার্য পরিচালনার সময় টেলিফোনের মাধ্যমে ডেকে এনে তাদের হয়রানি করার প্রমাণ রয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ বা নো ডেবিট করার প্রয়োজন হলে আইন সম্মতিতে বিজ্ঞ আদালতের আদেশেই কেবল কোন একাউন্ট ফ্রিজ করা যায়। কিন্তু শরীফ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না নিজেই লোকজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছেন।
তিনি দুদকের সমন্বীত জেলা কার্যালরয়, চট্টগ্রাম-২ এ কর্মরত থাকাকালে আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে স্যোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ, কক্সবাজার শাখা, কক্সবাজার-এর হিসাব নম্বর ০৩৯৫৩১০০১৭১৮১ ফ্রিজ করেন। ওই অ্যাকাউন্টের মালিক বেলায়েত হোসেন সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ১৫৩৯/২০২১ নম্বর রীট পিটিশন দায়ের করেন। ২০২১ সালের ২৭ জুন শুনানী শেষে হাইকোর্ট আদেশে কমিশনের অনুমোদন ব্যতীত কোন অ্যাকাউন্ট- ফ্রিজ করার ক্ষমতা তদন্তকারী কর্মকর্তার নেই” মর্মে উল্লেখ করেন।
আদালতের অনুমতি ব্যতীত দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৮ লঙ্ঘন করে লিখিতভাবে ২৫টি ব্যাংক হিসাব ও মৌখিকভাবে ০৮টিসহ মোট ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ ফ্রিজ) করেছে। এতে ভুক্তভোগীগণ চরমভাবে হয়রানী ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যা কমিশনকে বিব্রত করেছে।
কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে। এ বিষয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ দুদকের মামলা নং-১। আলামত হিসাবে জব্দকৃত অর্থ প্রাক্তন ডিএডি-এর নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা টাকা শরিফ উদ্দিন উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে দীর্ঘ ১ বছর ৪ মাস এই অর্থ নিজের হেফাজতে রেখেছেন। পরবর্তীতে “চট্রগ্রামে দুদক কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়নি ঘুষের ৯৩ লাখ টাকা”- শিরোনামে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচাক শরীফ উদ্দিনের সাথে আরও ২০ জন কর্মচারীর বদলি করা হয়। একমাত্র শরীফ উদ্দিন বাদে বাকী সবাই যথাস সময়ে বদলির আদেশ কার্যকর করেন। কিন্তু এই বদলির আদেশের বিরুদ্ধে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার শহিদুল ইসলাম লিটন নামে একজন ভুয়া মানবাধিকারকর্মী কর্মীকে দিয়ে হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট রিট পিটিশন খারিজ করার পর কয়েকটি জাতীয় ও চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকায় “হাইকোটের আদেশ বিকৃত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করান।
রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট প্রদান সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে ৬ সদস্যে একটি দল কাজ করেছে। পরিচালক জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত দলের সর্বকনিষ্ট সদস্য ছিলেন শরীফ উদ্দিন। ওই দলের অপর সদস্যরা হলেন, উপপরিচালক মুহা: মাহবুবুল আলম, উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত, উপপরিচালক সালাউদ্দিন, সহকারী পরিচালক জাফর সাদেক শিবলী এবং উপ সহকারী পরিচালক মো.শরীফ উদ্দিন।
শরীফ উদ্দিন ২০১৭ সালে কর্ণফুলী গ্যাসের বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার আপন ছোট ভাই শিহাব উদ্দিন সবুজকে কোন বিজ্ঞাপন ছাড়াই ডাটা এন্ট্রি অপারে রেটর পদে চাকুরী দেন। বর্তমানে আইটি ডিপার্টমেন্ট কর্মরত আছেন। অবেধভাবে তার আত্মীয় মুহাম্মদ শাহাবউদ্দিনকে ড্রাইভার পদে চাকরি দিয়েছেন। #