দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বহিস্কৃত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের মামলায় চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুদক। আসামী সাঈদ বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
গত ১৩ ফেব্রæয়ারি কমিশনের এক সভায় আসামীর বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে যে কোন দিন আসামীর বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের পক্ষ থেকে ফরোয়াডিংসহ এই চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এদিকে চার্জশিটের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে চার্জশিট দাখিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে,২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ আসামী এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে চার কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আসামীর বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ২২৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তার তদন্তে আরও বেরিয়ে এসছে আসামী মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ওমানে প্রায় ৭৮ লাখ টাকা পাচারের তথ্য। বিদেশে পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের পাশাপাশি ওই অর্থ ফেরত আনার কার্যক্রম শুরু করেছে দুদক। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কয়েক দফায় মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক। এখনও ওই তিন দেশ থেকে কাঙ্খিত জবাব আসেনি বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলকে ফাঁকি দিয়ে ওই টাকা দেশের বাইরে পাচার করেন। তিনি অবৈধ কর্মকান্ড,জুয়া বা ক্যাসিনোর থেকে এসব টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করেন। অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দুদক নিশ্চিত হয়েছে যে মমিনুল হক সাঈদ অবৈধভাবে অর্জিত টাকা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ওমানে পাচার এবং ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের বিভিন্ন সময় পর্যন্ত ৭২ হাজার ৭১৯ সিঙ্গাপুর ডলার ও ৬৮ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত পাচার করেন। বাকি অর্থ ওমানে পাচার করা হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, আসামী মমিনুল হক সাঈদ ২০১৮-১৯ করবর্ষে আয়কর নথিতে নিজের নামে এক কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। যার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে সাঈদের নামে দুই কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার টাকা জমার তথ্য পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে চার কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। এছাড়া স্ত্রী, সন্তান বা অন্য কারও নামে সম্পদ অর্জন করেছেন কি না- সে বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেলে আমলে নেওয়া হবে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, দুদকের মামলার আসামীর বিরুদ্ধে মতিঝিল ফকিরাপুল, আরামবাগ এলাকায় ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসানোর। তিন ওইএলাকার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসওয়ারি চাঁদা তুলতেন। প্রভাব খাঁটিয়ে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও গোপীবাগ বালুর মাঠে দুটি কোরবানির পশুর হাট বসাতেন।
জানা যায়, ফেরার পার্ক এলাকার অভিজাত সিটি স্কয়ার রেসিডেন্সে বসবাস করছেন তিনি। ক্যাসিনো স¤্রাট ইসমাইল হোসেন স¤্রাটের শিষ্য বলা হতো তাকে।
দুদক থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর এখন পযন্ত ক্যাসিনোকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট ও জি কে শামীমসহ শীর্ষ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দায়ের করে দুদক। #