দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস ২৬ জানুয়ারি উদযাপন করছে বাংলাদেশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতোমমধ্যে ব্যাপক আয়োজন সম্পন্ন করেছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর’র প্রধান কার্যালয়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু ও অর্থমন্ত্রীর ছবির সাথে নানা শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার, প্লেকার্ড, ফ্যাস্টুনে সাজানো হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) হোটেলে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডাবিøউসিও সার্টিফিকেট অফ মেরিট প্রদান করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।এছাড়া আনা নানা কর্মসূচি রয়েছে এনবিআর’এর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ কাস্টমস এ সংস্থার আওতায় সব চুক্তি বাস্তবায়ন করছে এবং আধুনিকায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি কাস্টমস প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনগণের জীবনমান অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরের শুল্ক আরোপ করে বিভিন্ন ক্ষতিকর পণ্যের আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমস বিভাগকে হতে হয় আধুনিক। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই আধুনিক কাস্টমসের যাত্রা।
১৯৫৩ সালে প্রথম কাস্টমস কো-অপারেশন কাউন্সিল (সিসিসি) গঠিত হয়। এরপর তা ১৯৯৪ সালে এ সংস্থাটি ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন নামে রূপ লাভ করে। বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৮৩। রফতানিমুখী শিল্পের প্রসার ও স্থানীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণের স্বার্থে সরকার প্রদত্ত শুল্ক সুবিধার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক, আধুনিক এবং আমদানি ও রফতানি ব্যবস্থায়ি ২০১৭ সালে বন্ড ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে বড় অংকের অর্থের জোগানদাতা হলো এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ। রাজস্বের ২৫ শতাংশের বেশি আদায় হয় কাস্টমস বা শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে। বাণিজ্য উদারীকরণের স্বার্থে শুল্ক-কর কমলেও এখনো কাস্টমস সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান খাত। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২ মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে কাস্টমসের অংশ ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। যা এনবিআরের মোট লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৯ শতাংশ।
এনবিআর সদস্য (কাস্টমস, অডিট ও আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) ড. মো. সহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ কাস্টম সরকারি সেবা প্রদানে আধুনিক ও ডিজিটাল ব্যবস্থার পথিকৃৎ। ইতোমধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রক্রিয়ায় অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড নির্ভর বিভিন্ন মডেল বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়াও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট, এনইপি, ই- পেমেন্ট, বন্ড অটোমেশন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় পৃথক কমিশনারেট গঠনসহ বিভিন্ন ধরনের অটোমেশনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক করোনা অতিমারির প্রভাবকে অতিক্রম ও সফল মোকাবিলায় কাস্টমস ডিজিটাল ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জনমুখী, ব্যবসা-বান্ধব ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কাস্টমস ডিজিটাল পদ্ধতি ন্যূনতম সংখ্যক রাজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে সর্বোচ্চ সেবায় আমদানি-রপ্তানি পণ্য চালান দ্রæত খালাসে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল কাস্টমসের এ অগ্রগতিকে আরও সুদৃঢ়করণের পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে জনসেবা নিশ্চিত করাই এনবিআরের অন্যতম অঙ্গীকার।
কাস্টমস বিভাগের আধুনিকায়নের আওতায় গৃহীত কর্ম-পরিল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইনটার্যাক্টিভ কাস্টমস ওয়েবসাইট ,বাংলাদেশ কাস্টমসের অটোমেশনের অংশ হিসেবে আধুনিক ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য চালান, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, এজেন্ট ইত্যাদি শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন বৈধ পণ্য চালান দ্রুত খালাস হচ্ছে, কম্প্লাইন্স বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে যথাযথ রাজস্ব আহরিত হচ্ছে।
পণ্য খালাসে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে আধুনিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের পাশাপাশি খালাসোত্তর নিরীক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। শুল্ক মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা আধুনিক করার লক্ষ্যে শুল্ক মূল্যের দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যসমূহের মূল্যসহ সঠিক ঘোষণা যথাযথভাবে প্রদান ও তা অটোমেটিক সিস্টেমে যাচাই করতে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম এ কার্যক্রম চলমান আছে।
আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাস্টমস বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কাস্টমস এনইপি স্থাপন করছে। এর মাধ্যমে স্টেকহোল্ডাররা আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য বা প্রশ্নের উত্তর সহজেই অনলাইনে পেতে পারবেন। এর ফলে ব্যবসায়ীরা সঠিক ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। গবেষণা, উদ্ভাবনী কাজ ও উন্নয়নে উৎসাহ প্রদান এবং নকল ও ভেজাল পণ্যের আমদানি রোধকল্পে বাংলাদেশ আইপিআর সংরক্ষণে তৎপর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আইপিআর সংক্রান্ত বিধিমালা জারি করা হয়েছে। #