দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ি চালাচ্ছিলেন ক্লিনাররা। আর ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যূ হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত গাড়ির মূল চালক হারুন মিয়া ও ঘটনার সময় চাপা দেওয়া চালক রাসেল খানের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির ময়লার গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
আজ শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমকে এসব তথ্যই নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস্ ও মিডিয়া শাখা) সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হারুন জানায়, ২০২০ সাল থেকে সে সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী এ গাড়িটি নিয়মিতভাবে চালাচ্ছেন। গত ২৪ নভেম্বর তার অনুপস্থিতিতে তার সহকারী মো. রাসেল খান গাড়িটি চালায়। হারুন ও রাসেল দু’জনের কারোরই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
এর আগে, শুক্রবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত গাড়ির মূল চালক হারুন মিয়া ওরফে কাইল্লা হারুনকে (৩৭) গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতার হারুনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, অবৈধভাবে গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে তা চালানোয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হারুন মিয়া ও এ কাজে সহযোগিতা করায় আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আব্দুর রাজ্জাককে কর্মচ্যুত করা হয়েছে।
তিনি জানান, বরাদ্দ থাকা গাড়ি নিজে না চালিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্যকে চালাতে দেওয়ায় করপোরেশনের গাড়িচালক (ভারী) মো. ইরান মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু ও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গত ২৪ নভেম্বর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর পল্টন মডেল থানার গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ার গোলচত্বরের দক্ষিণ পাশে রাস্তা পার হচ্ছিলেন নাঈম হাসান (১৮)। সে সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ট্রাক (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-শ ১১-১২৪৪) বেপরোয়া গতিতে নাঈমকে ধাক্কা দেয়। ওইসময় ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন রাসেল খান। অথচ রাসেল লাইসেন্সধারী চালক নন, নিয়োগপ্রাপ্ত চালক হারুন বদলি হিসেবে রাসেলকে গাড়িটি চালাতে দেন। রাসেল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এর আগে গ্রেফতার হওয়া রাসেলকে গত বৃহস্পতিবার তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
গুরুতর আহত অবস্থায় নাঈমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বেলা পৌনে ১২টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় এলাকার টহল পুলিশ ও পথচারীরা ট্রাকের চালক রাসেল খান ও গাড়ির ভেতরে থাকা অপর দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মী গোলাম রব্বানী ও বেলালকে আটক করে।
পরে তাদের তাদের নেওয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। জব্দ করা হয় ময়লার গাড়িটিও। এরইমধ্যে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত নাঈমের বাবা শাহ আলম দেওয়ান বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।#