বিশেষ প্রতিনিধি, দূরবীন নিউজ:
জনগনকে বিভ্রান্ত করতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ নিয়ে রিট করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখের নথি তলবের বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,দলের মধ্যে যারা তার নামে টুইটার চালায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ফেইসবুক একাউন্ট নেই’মির্জা ফখরুলবলেন, ‘‘ আমার কোনো ফেসবুক টুইটার নেই। এরপরও ‘ আমার ফেইসবুক, টুইটার এগুলোর রহস্য নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন। আমি অনেকবার বলেছি।আমি ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি দিয়েছি, উকিল নোটিশ দিয়েছি। তারপরেও দেখিযে, আমার নামে বিভিন্ন একাউন্ট খোলা আছে।”
‘‘ আমরা যতদূরজানি যে, সার্ভিলেন্সে এই সমস্ত মিডিয়ায় যখন গোয়েন্দারা ঢুকে তখন তারা বিভিন্ন রকমতৈরি করে। এটা শোনা কথা। কোথায় যাবো বলেন? কোনো ফেইসবুক নেই। যেগুলো ফেইক। আমিনিজে একবার ব্বিৃতি দিয়ে বলেছি। আমি থানায় জিডি করেছি থানায়, আমি মামলা করেছি,উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে।”
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ নিয়ে রিট প্রসঙ্গে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ যে বিষয় টার (খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ) কথা বলা হয়েছে- এটা তো ফেইক।
তিনি বলেন, এভারকেয়ারের যে রিপোর্টের কথা বলা হয়ে্ছে এই ধরনের কোনো রিপোর্টই এভারকেয়ার করে নাই। যে তারিখটা বসিয়েছে তারা- এটা ফলসলি করা হয়েছে। যে কাগজটা তারা দিয়েছে যার উপরে আদালত একটা হুকুম দিয়েছে।
এই হুমকটা আমি জানি না বিং এ ল‘ইয়ার.. একটা কিভাবে দিলেন?”‘‘ দেশে তো রাজনীতি নেই। এখন উদ্দেশ্যই তাদের একটাই- এই ধরনের(জন্মদিন) ইস্যুগুলো তুলে এনে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা, ডায়ভার্ট করার চেষ্টা করা, মূল সমস্যা থেকে জনগনকে ভুলদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। আর কিছুই না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এসব তারা করছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন,‘‘ এখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে একদলীয় শাসনে দেশচলছে। এটা থেকে প্রমাণিত হয়- জুডিশিয়রি ইজ নট ফ্রি। জুডিশিয়ারির কিন্তু এটা আমলেই নেওয়া উচিত ছিলো না। দে শুড হেল বিন টোটালি রং।”‘‘ যে ভদ্রলোক করেছেন সে তো পারসোনালি সংক্ষুব্ধ না।
আমি যতটুক আইন বুঝি যে, রিটটা তখনই হতে পারে ইফ এনি ওয়ান ইজ পারসোনালি এফগ্রিভ। ব্যক্তিগতভাবে যদি সে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, নিজেসংক্ষুব্ধ হয় তখন হি কেন গো ফর এ রিট। এটা তা না। উনার জন্মদিনের ব্যাপারে কি আছে,না আছে এটা তো তাদের দায়িত্ব না”৷
তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশেএকটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন- বুহলোকের কিন্তু জন্ম তারিখ আসল একটা আর সার্টিফিকেটে তারিখ আরেকটা আছে। কারণ হচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের জেনারেশনের সময়ে তখন সঠিকভাবে বাবা-মায়ের জন্ম তারিখ মনে রাখতে পারতেন না-জন্ম কবে হয়েছে, ডায়েরি-টায়েরিম্যানটেইন করতেন না। ফলে দুই রকম হতে পারে।”‘‘
এটা কোনো দিনইস্যু হতে পারে না। দিস ক্যান বি ইস্যু। হ্যাঁ এখন পার্টিকুলার একটা ডেটে কেউ জন্ম নিতে পারবে না- এটা একটা ঘোষণা দিয়েদিলে তো হয়ে যায়। নো বডি ওইদিন …, হিসাবকরে আপনাকে সন্তানের জন্মদানের কথা চিন্তা করতে হবে। এছাড়া তো উপায় নাই।”
গত শনিবার দলেরভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেরসিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরতে সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।‘এনআইডি স্বরাষ্ট্রে গেলে সুষ্ঠ নির্বাচন বিনষ্ট হবে’ মির্জা ফখরুলইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয়পরিচয় পত্র সংক্রান্ত কার্যাবলী ইতিপূর্বে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে।
কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের অধীনে মন্ত্রণালয়।”‘‘ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কর্তৃত্ব হস্তান্তর করা হলে তা স্বাধীন নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নুন্যতম সম্ভাবনাটুকুক বিনষ্ট করবে।
বিএনপির স্থায়ীকমিটি মনে করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলে তা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের নুন্যতম পরিসরকেও ধবংস করবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে চিরতরে ধবংস করবে।” অবিলম্বে এধরনের কার্য্ক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘শেকড় আছে বলেই বিএনপি আছে’আওয়ামী লীগেরসাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘বিএনপির শেকড় আছে বলেই বিএনপি টিকে আছে। এতো নির্যাতন, গুম-খুন, হাজার হাজারমামলার পরও বিএনপি টিকে আছে শুধু মাত্র এই দলের ‘ডিপ রুট’, মানুষের হৃদয়ের অনেকগভীর চলে গেছে বিএনপি।
‘ঋণ নির্ভর অর্থনীতি’তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশেএতো বেশি ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ছে অর্থনীতি এবং এটা এখন শেষ সীমায় এসে পৌঁছে যাচ্ছে।অর্থনীতিতে গত ১ যুগ যাবত সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক নীতির বাস্তবায়ন চলছে।
যারপ্রভাবে এক ধরনের মন্দাভাব চলছে, উতপাদন খাত শ্লথ হয়ে পড়েছে। ফলে রাজস্ব আয় কাংখিতলক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। ভ্যাট, শুল্ক ও আয়কর সব ক্ষেত্রে আদায় কম। আয় কমেযাওয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবেই খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।”‘‘ একগুচ্ছ বৃহৎ মেগা প্রকল্প, আছে দৈনন্দিন খরচ। বছরের পর বছর ধরে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ব্যয় অযৌক্তিকভাবে বাড়াচ্ছে সরকার। সব মিলিয়ে ব্যয় বেড়েই চলেছে।”
সারাদেশের জেলায়স্কুল-বিদ্যালয়ের বিরাট বিরাট গেইট করার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘‘ আপনারাদেখবেন, বিভিন্ন স্কুলে বড় বড় গেইট তৈরি করা হচ্ছে। এটা কোনো অগ্রাধিকার হতেপারে না। ওই টাকা দিয়ে যদি দু্ইটা ক্লাস ঘর করে যেতে তাহলে বাচ্চারা ভালোভাবে পড়তেপারতো।”‘‘ গেইট তৈরিকরা হচ্ছে যা একটা আনপ্রোডাটিভ খাতে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।
গতকালই আপনাদের টিভিতেদেখলাম যে, স্থানীয় সরকারের যে মন্ত্রণালয়ে শুরুতে দেওয়ালে কাঠের সমস্ত কাজ করেপুরো দেওয়াটা ঢেকে দেয়া হয়েছে। এটা তো আনপ্রোডাটিভ। এই ব্যয়টা কেনো? আপনি দেখবেনপ্রত্যেকখাতে আনপ্রোডাক্টিভ খাতে এতো ব্যয় বেড়েছে যার মূল্য দিতে হচ্ছে জনগনকেতাদের ট্যাক্সের টাকা থেকে।
”দুর্নীতির চিত্রতুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ দেখুন দুর্নীতি কোন মাত্রায় গেছে যে, পাবনার মতো জেলাশহরের একটা কোম্পানির কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে ভ্যাটের জন্য। ব্যবসায়ীদেরএকটা নিরব কান্না আছে। এভাবে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে।”‘‘ আমরা একজনপরিচিত ব্যবসায়ী তার কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে কাস্টমস ডিপার্টমেন্টথেকে। সে বলছে যে, এতো টাকা আমি কোত্থেকে দেবো? দিতে পারবো না।
যেহেতু সে ৫০ লক্ষটাকা ঘুম দিতে পারে নাই তাকে সেজন্য ১১ কোটি টাকার ইনকাম ট্যাক্স ধরিয়ে দিয়েছে।পরে সে আপীল-টাপিল করে সেটা কমিয়ে এনেছে প্রায় এক কোটি টাকায়। ১১ কোটি আর ১ কোটি।এটা তো আমি একজনের কথা বললাম। দিস ইজ হেপেনিং এভরি হোয়ার, এভরি খাত।”রিমান্ডে নিয়েওনির্যাতন না করার জন্য আলাদা অর্থ দিতে হয় বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
/এডিজেড/একে/দূরবীন নিউজ