দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দ্বিতীয় বিয়ে করায় খায়েশ মিটিয়ে দিয়েছিন স্বামী ময়না মিয়াকে প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন । ক্ষোভ মিটাতে গিয়ে স্বামী ময়না মিয়াকে ৬ টুকরা করা কথা স্বীকার করেছেন স্ত্রী ফাতেমা ।
রাজধানীর মহাখালীতে ময়না মিয়ার ছয় টুকরো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন আদালতে এই অপরাধের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রোববার (৬ জুন) পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে ফাতেমাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ফাতেমা স্বেচ্ছায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিস মাসুদ-উর-রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (১ জুন) ফাতেমাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বনানী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজধানীর মহাখালী থেকে ময়না মিয়ার ছয় টুকরো মরদেহটির রহস্য উদ্ঘাটন করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ময়না মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করায় তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা তাকে কুপিয়ে হত্যার পর মরদেহ ছয় টুকরো করে ফেলে দেন বলে জানায় ডিবি।
মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুরে রাজধানীতে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ উত্তর বিভাগের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।
তিনি বলেন, ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) সাকলায়েন ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রেজাউল হক টিম নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ঘটনাটির রহস্য উন্মোচন করেন এবং হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামি নিহতের প্রথম স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন-অর-রশীদ বলেন, গত ৩০ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের আমতলী এলাকায় একটা নীল রঙের ড্রামের মধ্যে বনানী থানা পুলিশ একজন পুরুষ ব্যক্তির মাথাবিহীন দেহ উদ্ধার করে। একই রাতে ১১টার পর মহাখালী বাস টার্মিনালের এনা কাউন্টারের কাছে একটা ব্যাগের মধ্যে উরু থেকে খণ্ডিত দুটি পা এবং কাঁধ থেকে খণ্ডিত দুটি হাতের অংশ উদ্ধার করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশ।
এ বিষয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ইউনিটের সঙ্গে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ভিকটিমের পরিচিতি শনাক্ত করার জন্য চেষ্টা চালায়। ডিবির গুলশান বিভাগের একটি টিম নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার বিষয় নিশ্চিত হয়।
ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, নিহত ব্যক্তি বনানীর কড়াইল এলাকায় তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমার সঙ্গে কয়েক দিন ধরে বসবাস করছিলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ বনানী থানার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির কোম্পানি অফিস থেকে ফাতেমা খাতুনকে গ্রেফতার করে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে মশিউর রহমান বলেন, গ্রেফতার ফাতেমা জানান, গত ২৩ মে থেকে তার স্বামী নিহত ময়না মিয়া কড়াইল এলাকায় তার বাসায়ই অবস্থান করছিলেন। পারিবারিক কলহ, টাকা-পয়সা বণ্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে ময়না মিয়ার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। একপর্যায়ে ফাতেমা পরিকল্পনা করে তার স্বামীকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে নিস্তেজ করেন এবং পরে জবাই করে লাশ গুম করেন।
ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, একপর্যায়ে ফাতেমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে ময়না মিয়া নিজের হাত মুক্ত করে ফাতেমার হাতে খামচি এবং কামড় বসিয়ে দেন। এতে ফাতেমার রাগ আরও বেড়ে যায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ময়না মিয়া ও ফাতেমা দুজনেই খাট থেকে পড়ে গেলে ফাতেমা ময়নার বুকের উপরে উঠে তার গলার বাকি অংশ কেটে ফেলেন। এভাবে রাত অতিবাহিত হলে সকালে ফাতেমা লাশ শুম করার জন্য ধারালো চাকু দিয়ে ময়না মিয়ার হাতের চামড়া ও মাংস কাটেন এবং ধারালো দা দিয়ে হাড় কেটে খণ্ডিত অংশকে তিনটি ভাগ করে রাখেন।
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি নীল রঙের পানির ড্রামে এবং খণ্ডিত দুই পা ও দুই হাত একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখেন ফাতেমা। এরপর ১ হাজার ৩০০ টাকায় রিকশা ভাড়া করে ময়না মিয়ার শরীরের অংশগুলো বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিয়ে বাসায় আসেন ফাতেমা।
গ্রেফতারের সময় ফাতেমার কাছ থেকে বোরখা, নিহতের রক্তমাখা জামা-কাপড়, ধারালো ছুরি, ধারালো দা, বিষাক্ত পেয়ালা ও শীলপাটা উদ্ধার করে পুলিশ।#