দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে পিপলস লিজিংয়ের ২৮০ জন ঋণ খেলাপির মধ্যে যারা এখনো উপস্থিত হননি, তাদের ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) কার্ড যাচাই করে বর্তমান নাম ও ঠিকানা দুদককে জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। আর এই নাম ঠিকানা পাওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে জানান, অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে পি কে হালদার তার আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে যে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তার একটি হলো পিপলস লিজিং।
তিনি জানান, অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের দেয়া এ সংক্রান্ত তালিকা দেখে হাইকোর্ট গত ২১ জানুয়ারি মোট ২৮০ জনকে তলব করেছিলেন।
তাদের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যকের (১৪৩ জন) ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন ৫১ জন উপস্থিত হন। এর পরে দ্বিতীয় দফায় ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল বাকি ১৩৭ জনের। ওই দিন আদালতে ৩৬ জন উপস্থিত হন।
গত মঙ্গলবার (৯ মার্চ) এ বিষয়ে শুনানি হয়, ওইদিন আরও ৫৬ জন ঋণখেলাপি আদালতে উপস্থিত হন। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন ২৪ লাখ টাকা পিপলস লিজিংয়ে ফেরত দেয়ার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জমা দেন। এরপরে আদালত এই আদেশ দিলেন।
এর আগে হাইকোর্ট তার আদেশে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার পাশাপাশি এই ২৮০ জনকে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণ দর্শাতেও বলেছিলেন।
গত ২১ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন কাজী এরশাদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল ওয়াহাব। কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বলেন, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড কোম্পানি অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আদালত এ কোম্পানি থেকে ঋণগ্রহীতাদের তালিকা চেয়েছিলেন। আমরা সে তালিকা দিয়েছিলাম।
সেই তালিকা থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ঋণখেলাপি এমন ২৮০ জনকে শোকজ করেছিলেন। ঋণ গ্রহণ ও খেলাপির বিষয়ে এই ২৮০ জনকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।
২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিক লোকসানের মধ্যে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না তারা।/একে