দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
হাইকোর্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১৭ জন কালেক্টিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত সংক্রান্ত যাবতীয় নথি তলব করেছেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই নথি জমা দিতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ৯ মার্চ এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের দ্বৈত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি শুনানিতে দুদকের নেয়া পদক্ষেপের তথ্য ২৫ ফেব্রুয়ারি জানাতে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন আদালত। এ অবস্থায় আজ নথি তলব করা হলো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আগের জারি করা রুলে ওই ১৭ নেতার বিরুদ্ধে দুদকের পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চান। আর ওই বিষয়ে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা যায়, আদালতে শুনানিতে মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এম এ আজিজ খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চ ২০১৪ সালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিমানের ১৭ সিবিএ নেতাকে পাঠানো দুদকের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানতে চান।
নোটিশের পরে নেয়া পদক্ষেপ সাত দিনের মধ্যে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে জানতে চেয়ে আদেশ দেয়া হয়েছিল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে আদালতের কাছে সময় চায় দুদক। সে অনুযায়ী হাইকোর্টে ওই ১৭ জনের বিষয়ে প্রতিবেদন দেয় দুদক।
আদালতকে দুদক জানায়, সিবিএ নেতারা দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তাদের বক্তব্যের বিস্তারিত কিংবা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কি-না সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এ প্রতিবেদন দেখার পর রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সংশ্লিষ্ট নথি আদালতে জমা দেয়ার আরজি জানান। এরপর আদালত শুনানি নিয়ে নথি তলবের আদেশ দেন।
২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক রুলের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মো. মশিকুর রহমানসহ বিমানের ১৭ জন নেতার দুর্নীতি তদন্তে দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের আদেশ দেন।
আইনজীবীরা জানান, বিমানের সিবিএ নেতা মো. মশিকুর রহমান, আজাহারুল ইমাম মজুমদার, আনোয়ার হোসেন, মো. ইউনুস খান, মো. মনতাসার রহমান, মো. রুবেল চৌধুরী, মো. রফিকুল আলম, মো. আতিকুর রহমান, মো. হারুনর রশিদ, আবদুল বারী, মো. ফিরোজুল ইসলাম, মো. আবদুস সোবহান, গোলাম কায়সার আহমেদ, মো. আবদুল জব্বার, মো.আবুল কালাম, আসমা খানম ও মো. আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য ২০১৪ সালে দুদক নোটিশ দেয়।
অভিযুক্তরা ২০১৪ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সিবিএ (বিমান শ্রমিক লীগ) নেতা ছিলেন। তাদের ২৬ জানুয়ারি দুদকে হাজির হতে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি নোটিশ দেয় দুদক। তবে, দুদকের নোটিশে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান তারা।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘দুদকের নোটিশে সাড়া দেয়নি বিমানের সিবিএ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন সংযুক্ত করে ওই বছর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে দুদকের পদক্ষেপ গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ জানান, ওই রুল শুনানির জন্য ছিল আদালতে। কোনো ব্যক্তিকে দুদক থেকে নোটিশ দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সে বিষয়ে সাড়া না দিলে দুদক আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। অথচ ১৭ সিবিএ নেতার ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়েছে কি-না, তা আদালতকে জানানো হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে আদালত ওই আদেশ দেন। /