দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বাসা বাড়ির বর্জ্য সংগ্রহে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি) নেতারা। তারা একইসেঙ্গ আরো হুমকি দিয়েছেন, অন্যথায় বর্জ্য সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়ার।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কাফনের কাপড় পরে প্রতিবাদ ও বানববন্ধন কমৃষচিতে অংশ নিয়েছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন পিডব্লিউসিএসপির নেতারা বলেছেন, তারা অস্থিত্বের স্বার্থে বর্জ্য সংগ্রহ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।
মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, ঢাকার বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটি শুধু নির্ধারিত কনটেইনার থেকে ল্যান্ডফিলে ময়লা অপসারণের কাজ করছে।
তাদের যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। তাই তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পিডব্লিউসিএসপির প্রায় ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নাগরিকদের বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের কন্টেইনারে পৌঁছে দেয়।
‘এজন্য শুধুমাত্র সেবা মূল্য হিসেবে আমরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে নিতাম। যা দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও অফিস ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হতো।’
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এই নেত্রী বলেন, কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, নগরবাসী তাদের হোল্ডিং করের সঙ্গে মোট করের দুই শতাংশ বিল বর্জ্যের জন্য দিয়ে থাকেন।
তার সঙ্গে আবার নতুন করে ১০০ টাকা ধার্য করে টেন্ডারের মাধ্যমে এই কাজ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে যেসব বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা এখন কাজ হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন।
লাকী বলেন, এরই মধ্যে ডিএসসিসি তাদের ময়লা সংগ্রহের কাজ টেন্ডারে দিয়ে দিয়েছে। এতে দক্ষিণ সিটিতে আমাদের ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বেকার হয়েছে। তারা এখন কর্ম হারিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত হচ্ছে।
ময়লা সংগ্রহের এই সেবামূলক কাজটি এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। টেন্ডারে দেয়ার কারণে দক্ষিণ সিটিতে নাগরিকদের হয়রানি আরও বেড়েছে। ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ময়লার বিল ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাধর কাউন্সিলর বা ঠিকাদারদের লোকজন সেই ১০০ টাকার পরিবর্তে কোথাও কোথাও ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।
সিটি করপোরেশন কৌশলে তাদের এই সেবামূলক কাজকে ব্যবসায় রূপান্তর করে কাউন্সিলরদের হাতে দুলে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
লাকী আরও বলেন, আমরা দুই মেয়রের আচরণে হতবাক হয়েছি। নগরীর বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরা যখন এই শহরকে পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করে আসছি ঠিক সেই কর্মীরা গত দুই বছর ধরে দুই মেয়রের সঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু আমাদেরকে কোনো সাড়া দেয়া হয়নি।
‘এর প্রতিবাদে আমরা যখন গত ১২ জানুয়ারি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করি তখন মেয়র আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাজি হলেন। তিনি ডেকে নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলে দিলেন, আমাদের অনুমোদন দিয়ে দিতে। তখন আমরা সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করি।
এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদেরকে বললেন, মেয়র নাকি তাকে কিছুই বলেননি। অপরদিকে বর্তমানে আমাদের কোনো অনুমোদন না থাকায় সব জায়গায় কাউন্সিলর ও তাদের সন্ত্রাসীরা আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ড দখল করে নিয়েছে। আমরা যতদূর জানতে পেরেছি- কাউন্সিলরদের চাপের কারণে এই টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে।’
লাকী বলেন, ঢাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি) এর সুসংগঠক প্রয়াত মেয়র মো. আনিসুল হক। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠারপর তিনি ২০১৫ সালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওয়ার্ড ভিত্তিক সকল সংগঠনকে একত্রিত করে ময়লা নিয়ে কাজ করার জন্য এই ফাউন্ডেশনকে প্রত্যয়ন দেওয়ার ক্ষমতা দেন।
তিনি বলতেন, পিডব্লিউসিএসপি হচ্ছে ‘ময়লার মেয়র’, আর আমি হচ্ছি ‘সিটি করপোরেশনের মেয়র’। কিন্তু প্রয়াত মেয়রের সেই উদ্যোগকে ধ্বংস করে ১৯ হাজার বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হরণ করে শুধু মাত্র কাউন্সিলরদের ব্যবসার জন্য এখন ময়লা সংগ্রহের কাজকে টেন্ডারে দেওয়া হচ্ছে।#