দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার অর্থাৎ বিয়ের কাজী হতে পারবেন না, উল্লেখ করে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (১০ জানুয়ারি) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর ওই রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্ট একই সঙ্গে দিনাজপুরের এক নারী নিকাহ রেজিস্ট্রার প্রার্থীর পক্ষে দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন।
গণমাধ্যমকে এই রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারীর আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, ‘আদালতের প্রকাশিত রায়টির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নারীরা মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় ফিজিক্যাল ডিসকোয়ালিফেশনে থাকেন। সেক্ষেত্রে মুসলিম বিবাহ হচ্ছে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আমাদের দেশে বেশিরভাগ বিয়ে পড়ানো হয় মসজিদে।
ওই সময়ে নারীরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন না এবং তারা নামাজও পড়াতে পারেন না। সুতরাং বিয়ে যেহেতু একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সেহেতু এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নারীদের দিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়।
এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে হাইকোর্ট এ সংক্রান্ত রিট মামলার ওপর জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হতে পারবেন না।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস কে সাইফুজ্জামান বলেন, আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, একজন নারী একজন মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার হতে হলে কিছু কিছু কার্যক্রম করতে হয়। নারী হিসেবে সব জায়গায় যেতে পারবেন কিনা। রাত-বিরাতে বিয়ের অনুষ্ঠান হতে পারে। সেখানে যেতে পারবেন কিনা।
মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রারদের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে নারীদের প্রত্যেক মাসে একটি বিশেষ সময় আসে, যে সময়টাতে ধর্মীয়ভাবেই নারীরা মসজিদেও যেতে পারেন না। আবার নামাজও পড়তে পারেন না। এ সময় যদি কারও বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, সেখানে তো কোনও নারী যেতে পারবে না। তাই পাবলিক অফিসের নারীদের অন্যান্য কাজের থেকে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রমটি একেবারেই আলাদা।
রিটকারীর আরেক আইনজীবী ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। নারীরা বিমানের পাইলট হচ্ছেন, সশস্ত্র বাহিনীতেও কাজ করছেন। তাহলে কেন নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না? তাই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল দায়ের করবো।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ সালে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনজন মহিলার নাম প্রস্তাব করেন উপদেষ্টা কমিটি। তিন সদস্যের ওই প্যানেলের বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এরপর ২০১৪ সালের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়’ মর্মে চিঠি দিয়ে তিন সদস্যের প্যানেল বাতিল করে।
পরে আইন মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন নিকাহ রেজিস্ট্রারের প্যানেলের এক নম্বর ক্রমিকে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
শুনানি শেষে জারি করা রুলটি খারিজ করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এর ফলে বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবে না মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।/