দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
এবার কেরানীগঞ্জের ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও কারখানার বিরুদ্ধে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণে জড়িত (অপরাধে) ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালককে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।দেশের এই উচ্চ আদালত একইসঙ্গে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।
রোববার (৩ জানুয়ারি) বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ রোধে জনস্বার্থে করা এক রিটের ওপর আগের জারি করা রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ নির্দেশনাসহ এই আদেশ জারি করেন।
হাইকোর্টে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হোসেন।
কেরানীগঞ্জের ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলো হলো- আহামদ হোসেন ওয়াশিং, আমেনা ওয়াশিং, সানমুন ওয়াশিং, ইডেন ওয়াশিং, বিসমিল্লাহ ওয়াশিং, লোটাস ওয়াশিং, গ্লোবাল ওয়াশিং, রুবেল ওয়াশিং, আনুষ্কা ওয়াশিং, সততা ওয়াশিং, চঞ্জল ওয়াশিং, আব্দুর রব ওয়াশিং, ঢাকা ওয়াশিং, আজান ওয়াশিং, নিউ সাহারা ওয়াশিং, দোহার ওয়াশিং, রিলেটিভ ওয়াশিং, নিউনাশা ওয়াশিং, ইউনিক ওয়াশিং, মৌ ওয়াশিং, সেতু ওয়াশিং, কোয়ালিটি ওয়াশিং, জুয়েনা ওয়াশিং, কামাল ওয়াশিং, ওয়াটার কালার ওয়াশিং, পারজোয়ার ওয়াশিং, জিএম ওয়াশিং, কুমিল্লা ওয়াশিং, আছিয়া ওয়াশিং, ও লিলি ওয়াশিং।
হাইকোর্টের আদেশে আরো বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে বা তীরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন ময়লা-আবর্জনা ফেলতে পারে না। আর এই বিষয়ে তদারকীর ব্যবস্থা করতে ঢাকার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবির) পক্ষে ২০১০ সালে একটি রিট করা হয়। ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১ জুন তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতরে বাইরে রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতর অবৈধ বা বুড়িগঙ্গা নদী দূষণকারী কারখানা বন্ধ করে দেয়। দু-দু’বার বন্ধ করার পারও কারখানাগুলো আবারও চালু করা হয়েছে। ফলে আগের মতোই দূষণের শিকার হচ্ছে বুড়িগঙ্গার পনি। কিন্তু পরিবেশ আইন অনুযায়ী দূষণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, আজ (রোববার) পরিবেশ অদিদফতরের দাখিল করা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্ট রয়েছে সেখানে। সেগুলো মারাত্মক পানি দূষণ করছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন। না হয় দূষণ বন্ধ হবে না। এমন আরজি জানালে আদালত এই ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কারখানা বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মনজিল মোরসেদ বলেন, এর আগে হাইকোর্ট বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালির লাইন (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ৬ মাসের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওইসব নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি।
ওই আবেদনের ওপর শুনানির এক পর্যায়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এম খানকে তলব করেছিলেন আদালত। পরে ২০২০ সালের ৪ মার্চ তাকসিম এম খান আদালতে হাজির হয়ে রায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন,পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট ও ৭ সেপ্টেম্বর ওয়াসার পক্ষ থেকে আরও দুটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলেও রায় ও আদেশ বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না থাকায় তা গ্রহণ করেনি আদালত। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওয়াসার এমডির পক্ষে আরও একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হলে আদালত সেটিও গ্রহণ করেননি।
ওইদিন আদালত পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কেরানিগঞ্জ থানার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন দু’সপ্তাহের মধ্যে বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ পাশে নদী ও নদী তীরে ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য ফেলা ও স্তূপ করা বন্ধ করতে। ১৫ দিনের মধ্যে আদেশ প্রতিপালনের প্রতিবেদনও দিতে বলা হয়। সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় আবার আদেশ দিল উচ্চ আদালত।
এছাড়াও ২০১৪ সালে দায়ের হওয়া আরেকটি রিটের আদেশে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দু’সপ্তাহের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পাশে নদী ও নদী তীরে আবর্জনা/বর্জ্য ফেলা ও স্তূপ করা বন্ধের নির্দেশ দেন।
একইসঙ্গে যে ময়লা-আবর্জনা/বর্জ্য ফেলা হয়েছে তা অপসারণ করে ১৫ দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়া মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন।/