দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে থেকে কানাডার ‘বেগমপাড়া’সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমান পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে- সে বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে দীর্ঘসময় নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের পর অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়। আমরা আজ তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। তারা কী কী প্রস্তুতি নিয়েছেন এসব বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করি আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’
বিদেশে অর্থপাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।
এ রুল বিবেচনায় থাকা অবস্থায় বিদেশে টাকা পাচারকারীদের নাম-ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য (মামলাসহ, কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা) প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।
বেগমপাড়ার বিষয়টি আলোচনায় আসার আগেই গত ২২ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে দুদক কমিশনের মহাপরিচালক (অর্থপাচার) আ ন ম আল ফিরোজ এক চিঠিতে বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত অর্থবিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তালিকা চান।
বাংলাদেশ সরকার এর আগে বেগমপাড়ায় ২৮ বাংলাদেশির বাড়ির খোঁজ পেয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পায়। যার মধ্যে বেশিরভাগেরই মালিক সরকারের উচ্চপদস্থ আমলা।
তাদের নামের তালিকার খোঁজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকা হাতে পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে।
গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘কানাডায় খবর নিয়েছি, প্রাথমিকভাবে কিছু সত্যতা পেয়েছি। মনে করছিলাম রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে।
কিন্তু দেখা গেল রাজনীতিবিদ চারজন। সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ীও আছে। বিদেশে যদি কেউ বৈধভাবে টাকা নেয়, তাহলে কোনো আপত্তি নেই। তবে অবৈধভাবে পাচার করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সরকারি কর্মকর্তাদের অর্থপাচারের বিষয়ে গত ২৩ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশের বাইরে অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য তদন্ত সংস্থা কাজ করছে।
বৈঠকের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আমরা সবাই একসঙ্গে বসে ঠিক করলাম। সবার বক্তব্যগুলো আমাদের দিল, আমরা এটা এফিডেভিট করে আদালতে জমা দেবো, অন্য কিছু না। তথ্য যা আছে সেটাই দেওয়া হবে। সবাই আদালতের আদেশ মোতাবেক জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল জানতে চেয়েছেন কারা কি পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেমন আমরা দুদককে বলেছি, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কাগজ রেডি করছি। আশা করছি, ১৭ ডিসেম্বরের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে আদালতের আদেশ মতো দাখিল করতে পারবো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিএফআইইউসহ সবাই একই কথা বলেছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ পাচারের সার্বিক বিষয়ে দুদকের সর্বশেষ অবস্থান আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে দাখিল করবো। টাকা পাচার সংক্রান্ত দুদক যা করেছে তার এ টু জেড তথ্য উপাত্ত আদালতে দাখিল করবো। সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মহোদয়কে অবহিত করেছি। বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের নিয়ে ১৯ এবং ২১ নভেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাজনীতিবিদেরা নন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। ’ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
গোপনে কানাডার টরেন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে, কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা সেখানে থাকে। ’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। পাচারে শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা। তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, আসলে সংখ্যাটি তত নয়। ’পাচারের দায় বিদেশি সরকারও এড়াতে পারে না । এরপরই হৈচৈ শুরু হয়েছে। /