দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) শুরু হচ্ছে । যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, যা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজ করছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে গত তিন সপ্তাহ ধরে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজারের নিচে নেমে এসেছে, অর্ধেকে নেমে এসেছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও। পরীক্ষার সংখ্যা অনেক কম হলেও পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হারও নেমে এসেছে দৈনিক ১০ শতাংশের কাছাকাছিতে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনা মহামারীর মধ্যে এখন পর্যন্ত যে খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর অন্যতম হলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। মহামারীর কারণে ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা। আটকে আছে এইচএসসি পরীক্ষাও। সার্বিক বিবেচনায় এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলেই মনে করছেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের অনেকে। তাই আবারো বাড়তে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্রে এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা প্রকাশ থেকেও। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩৯ দিনের জন্য প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেন সে সেময় গণমাধ্যমকে জানান, অক্টোবর ও নভেম্বরকে দুটো টার্গেট করে দু’টি লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নভেম্বর থেকে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। অক্টোবরে খোলার বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা নেই। পরিস্থিতির উন্নতি হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি নভেম্বরে স্কুল খোলা না যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী যেটি বলেছেন, অর্থাৎ অটো পাস ছাড়া উপায় নেই।
অন্য দিকে বর্তমান পরিস্থতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া প্রজ্ঞার পরিচায়ক হবে না বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তারা সার্বিক পরিস্থিতি; বিশ্বপরিস্থিতি বিবেচনা করে বলতে পারবেন। তবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যত দিন উচ্চমাত্রায় থাকবে তত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না।
কারণ, শিক্ষার্থীরা হচ্ছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সম্পদ। তাদেরকে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলা যাবে না। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব প্রতিষ্ঠান আছে যেমন : জাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরি, এগুলো খোলার আগে আরেকটু সতর্ক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সে ক্ষেত্রে শুধু নিজেদের দেশের নয়; বরং আশপাশের দেশগুলো বিশেষ করে যেসব দেশে সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি তারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটিও দেখার দরকার আছে। অর্থাৎ, করোনা পরিস্থিতি আমাদেরকে যে অবস্থায় নিয়ে এসেছে সেটি নিয়ে আমাদেরকে নিজেদের অভিজ্ঞতাকে বিশ্ব অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত করে সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়াটা বাঞ্ছনীয়।
তিনি আরো বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে সেটিও তাৎপর্যপূর্ণ। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সেটিকেও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ শীত আসন্ন। শীতের সময় সর্দি, কাশি এগুলো আরো বেড়ে যায়। যদি সেগুলো বেড়ে যায় আর করোনার সংক্রমণও থাকে তাহলে পরিস্থিতি যে জটিলতার দিকে যাবে সেটি সহজেই বোঝা যায়। #