দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
বাংলাদেশে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখের বেশি। আর বিদ্যুতের গ্রাহক আজ বড়ই অসহায় এবং বিদ্যুৎ অফিসের জালিয়াত ও ঘুষখোর কর্মকর্তা -কর্মচারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তার রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানিয়ে ফেলেন। বিদ্যুৎ অফিসের মিটার রিডার, বিল প্রস্তুতকারী, ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশীদের বিরুদ্ধে সারাশি অভিযান চালালে জালিয়াতির অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জালিয়াত চক্র এবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ বিদ্যুৎ বিভাগের বড় বড় কর্মকর্তার বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও বিদ্যুতের ‘ভুতুড়ে বিল’ পাঠিয়েছে। কিন্তু সারা দেশে কত লাখ বা কত কোটি সাধারণ গ্রাহক ভুতুড়ে বিল নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন, তার কোনো হিসাব নেই।
এদিকে বেঁধে দেওয়া সাত দিনের মধ্যে ভুতুড়ে বিল সমন্বয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ভুতুড়ে বিলের জন্য দায়ী চার বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। বিদ্যুৎ বিভাগ গত ২৫ জুন একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে।
এরই মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) চার প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ৩৬ জনকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর ১৩ মিটার রিডার সুপারভাইজারকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে মার্চ থেকে। বন্ধ থাকা অফিসে “ভুতুড়ে বিল” এসেছে। আমার বাসায়ও এসেছে।’
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মইন উদ্দিন, বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের চারজন কর্মকর্তাসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাসাবাড়িতে ভুতুড়ে বিল এসেছে।
ভুতুড়ে বিল নিয়ে রোববার বেলা একটায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতেই যদি ভুতুড়ে বিল আসে, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, শনিবার পর্যন্ত চার লাখের বেশি গ্রাহকের বাড়তি বিলের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
বাড়তি বিল সমন্বয় করতে যাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন এবং বাড়তি বিলের জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শনাক্ত করতে বিদ্যুৎ বিভাগ একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছিল। সেই কমিটির প্রতিবেদনে তিন শ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ডিপিডিসির বেশ কিছু কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ভুতুড়ে বিল নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী কয়েক দফায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন। দ্রুত সমাধানের জন্য তিনি নির্দেশ দেন। এর কিছুদিন পর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহীও অনলাইনে বৈঠক করেন। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিদ্যুৎ–সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ভুতুড়ে বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব সুলতান আহমেদ বলেন, কোনো ব্যক্তিকে বাড়তি বিল দিতে হবে না। কোনো গ্রাহক যদি মনে করেন, তাঁর বাড়তি বিল এসেছে, অভিযোগ করলেই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় সবারই সমাধান করা হয়েছে। কিছু হয় তো বাকি আছে।
৩০০ জনকে শাস্তির সুপারিশ:
চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত টাস্কফোর্স। এ ছাড়া ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) দুজন মিটার রিডারকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে।
রাজশাহী ও রংপুরের ১৬ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের দুজন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ২৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শাও, বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। দেশের সব থেকে বড় বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি সমিতির কারা কারা ভুতুড়ে বিলের জন্য দায়ী, তা জানায়নি আরইবি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান চাকমা মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করে সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কিছু ব্যক্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, ৩৬ জনকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিছু মাঠকর্মীকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি।’
প্রসঙ্গত, দেশে ছয়টি বিতরণ সংস্থা রয়েছে। প্রতিটির বিরুদ্ধে প্রকৃত বিলের চেয়ে কোথাও কোথাও তিন শ গুণ বেশি বিল করার অভিযোগ উঠেছে। আরইবি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এখনো টাস্কফোর্সকে তাদের সংস্থাগুলোর দায়ী কর্মকর্তাদের তালিকা দেয়নি।# কাশেম