দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
বাজেটের সুষ্ঠু বন্টনের মাধ্যমে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ এবং ব্যাপ্তি বাড়ানো প্রয়োজন। একইসাথে বিভিন্ন পেশাজীবি ও সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করার মাধ্যমে পরিকল্পিত, সুষম ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।
শনিবার (১৩ জুন ) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) অনলাইনে আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২০-২১: পরিকল্পনাগত পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞ ও পরিকল্পনাবিদগণ এই অভিমত প্রদান করেন।
বিআইপি’র সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে নগর এলাকার স্বাস্থ্য অবকাঠামোর পুনর্গঠনের সাথে সাথে সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানের সাথে সাথে জাতীয় বাজেটে কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী তুলে ধরেন আলোচকেরা।
ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ পর্যালোচনা করতে গিয়ে বাজেট প্রণয়নে বিদ্যমান দূর্বলতার কথা উল্লেখ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতার প্রকাশ্যমান দূর্বলতাকে কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট প্রনয়ণ এর কথা বলেন তিনি।
এছাড়া নগরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভংগুর দশাকে উল্লেখ করে জেলা শহরগুলোতে সদর এলাকায় উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স স্থাপন করবার সাথে সাথে বড় শহরের বস্তিপ্রবণ এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাবনা দেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। বাজেটের সাহিত্য না বুঝতে না পারলে শুধুমাত্র প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে পারবে না বলে অভিমত দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বাজেটের পরিকল্পনাগত পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেন বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর মাধ্যমে সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দের স্থান-কাল-পাত্রের নির্মোহ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অন্তর্ভূক্ত প্রকল্পসমূহের স্থানিক বিশ্লেষন এবং প্রকল্প গ্রহণের আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণের মাধ্যমেই জনগণের করের টাকার প্রকৃত ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।
করোনার প্রভাবে বাজেট প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্ব আপেক্ষিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও কৃষি, পরিবেশ ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি। এছাড়াও বাজেট প্রণয়ণে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা অন্তর্ভূক্ত হলেও সমাজবিদ, পরিকল্পনাবিদ, কৃষিবিদসহ অন্যান্য পেশাজীবি ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ব্যতিরেকে সার্বজনীন ও কল্যাণমূলক বাজেট তৈরী করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন ডঃ আদিল।
বাজেটে ঘোষিত সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দকে অপ্রতুল উল্লেখ করে সামাজিক নিরাপত্তা জাল বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও পরিবহন, বিদ্যুতসহ বিভিন্ন খাতে মেগা প্রজেক্টগুলোর করোনা বাস্তবতায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত প্রভাব বিশ্লেষণ করে বাজেট বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
একইসাথে পৌরসভাগুলোতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে বড় শহর গুলোর উপর চাপ কমানো এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিগত বছরের বাজেট ও প্রকল্প ব্যয়ের গুণগত সমীক্ষা বিবরণী জনগণের নিকট উপস্থাপন করবার দাবী জানান বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক।
ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং পরিকল্পনা কমিশন এর উপ-প্রধান ড. মোঃ তৈয়বুর রহমান সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে নীতি ও কৌশল প্রণয়নে গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাজেটের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক বরাদ্দের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
একইসাথে বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে মত দেন তিনি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করণে অর্থনৈতিক কাঠামোর দূর্বলতা দূর করার সাথে সাথে জেলা ভিত্তিক ও আঞ্চলিক বাজেট প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন ডঃ তৈয়ব।
বাজেট প্রণয়নে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে উল্লেখপূর্বক অতি ধনী ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন এর সহ-সভাপতি আমানুর রহমান। স্থানীয় সরকার এর বাজেট প্রণয়নে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ এর সুযোগ থাকলেও জাতীয় বাজেট এ সেটা অনুপস্থিত উল্লেখ করে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করবার আহবান জানান তিনি।
বাংলাদেশ পুলিশ এর উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহ-সভাপতি ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক বাজেট প্রণয়ণে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্প অনুমোদনে এসডিজি লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা প্রস্তুত করবার উপর গুরুত্বারোপ করেন। একইসাথে সবার জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত দেশে আবাসন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ করনে ড. যাবের সাদেক।
বিআইপি’র সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ আশা প্রকাশ করেন, বাজেটে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রস্তাবনার মাধ্যমে জনগনের জীবনমানের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে সরকার দৃষ্টি দিবে। উপরন্তু জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন; দেশের ভৌত ও অবকাঠামোগত প্রকল্প প্রণয়নে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্ব প্রদান; বাজেটে কৃষি ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি; বাজেটের প্রকল্প নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাবকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রকল্পের গূনগত মান ও প্রভাবকে বিবেচনায় নেয়া; শহর এলাকায় টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তে পদচারী ও সাইকেল বান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে প্রকল্প বরাদ্দ প্রদান প্রভৃতি প্রস্তাবনা দেন আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বিশেষজ্ঞগণ। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।