দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চিরুনি অভিযানের ২য় দিনে ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ১৩ হাজার ৯৭৮টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শনকালে ২১৬টি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।
ডিএনসিসির অভিযানে ১০ হাজার ১২১টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ অর্থাৎ বিভিন্ন স্থানে তিন দিনের বেশি জমা পানি পাওয়া যায়। এসকল স্থানে ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীগণ পরিষ্কার করেন এবং মশকনিধন কর্মীগণ মশার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে।
রোববার (৭ জুন) সকাল ১০টা থেকে ডিএনসিসি ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে বিশেষ এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) পরিচালিত হয়েছে।এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ৬ জুন থেকে চলমান ১০ দিনব্যাপী বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে।
গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন। তিনি আরো জানান,এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।অন্যান্য বাড়ি ও স্থাপনার মালিককে সতর্ক করা হয়। লার্ভা পাওয়া স্থানগুলো হচ্ছেঃ পরিত্যক্ত টায়ার, বালতি, ফুলের টব, বোতল, পানির মিটার, গ্যারেজ, পানির হাউজ, মাটির পাত্র, ভাঙ্গা মগ, বাড়ির মেঝে, পানির ট্যাংক, প্লাস্টিকের পাত্র, ছাদের ড্রেন, দইয়ের পাত্র, পরিত্যক্ত কমোড, ডাবের খোসা, ভাঙ্গা পাতিল, বেইজমেন্ট, দুই বাড়ির মধ্যবর্তী স্থান ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, গতকাল চিরুনি অভিযানের প্রথম দিনে ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ১১ হাজার ৯৬৯ টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ১৩১টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৮ হাজার ৩৮০টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
চিরুনি অভিযান পরিচালনার উদ্দেশে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আবার প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডের ১টি সেক্টরে অর্থ্যাৎ ১০টি সাবসেক্টরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এভাবে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে সমগ্র ডিএনসিসিতে চিরুনি অভিযান সম্পন্ন করা হবে।
প্রতিটি সাবসেক্টরে ডিএনসিসির ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১ জন মশক নিধনকর্মী, অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ জন মশককর্মী ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা আছে কিনা, কিংবা কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে আছে কিনা, কিংবা ময়লা-আবর্জনা আছে কিনা, যা এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক, তা পরীক্ষা করছে।
চলমান এই চিরুনি অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৯জন কীটতত্ববিদ, ডিএনসিসির ৩ জন কীটতত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাগণ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডিএনসিসির চিরুনি অভিযানসহ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে।
চিরুনি অভিযান চলাকালে যেসব বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা কিংবা এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে, তার ছবি, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি অ্যাপে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এর ফলে চিরুনি অভিযান শেষে ডিএনসিসির কোন কোন এলাকায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে তার একটি ডাটাবেস তৈরি হবে। ডাটাবেস অনুযায়ী পরবর্তীতেও তাদেরকে মনিটর করা সহজ হবে।
আজ উত্তরা অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৩০৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ২৭টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ৯৫১টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
মিরপুর-২ অঞ্চলে মোট ৩ হাজার ৩০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১১টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ১ হাজার ৮৩৮টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
মহাখালী, অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৬১১টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৪৬টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ১ হাজার ১৪৬টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাহিদ আহসান কর্তৃক তেজগাঁও শিল্প এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৫টি মামলায় মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। একই সাথে নোংরা ও এডিস মশার প্রজনন উপযোগী অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থাকায় আরও ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।
মিরপুর-১০ অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৮৭টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৯টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া এ অঞ্চলে ৫৭০টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
কারওয়ান বাজার অঞ্চলে মোট ২ হাজার ৫২টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ১ হাজার ৭২৭টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। সেসব স্থানে কীটনাশক ছিটানো হয়েছে।
হরিরামপুর অঞ্চলে মোট ১হাজার ৫৯০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ২৬টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ১ হাজার ৩১৫টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
দক্ষিণখান অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৩৪০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৩টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ১ হাজার ৭১টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
উত্তরখান অঞ্চলে মোট ৯৩৯টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে কোন এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। তবে ৬২৫টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
ভাটারা অঞ্চলে মোট ৪৪৫টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৪৮টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া ৪০৩টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
সাঁতারকুল অঞ্চলে মোট ৫৬৭টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৭টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ৪৭৫টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
উল্লিখিত সকল সম্ভাব্য এডিস মশার প্রজননস্থলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনাপূর্বক কীটনাশক ছিটানো হয়েছে এবং জনসাধারণকে এবিষয়ে পরবর্তীতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলমান এই অভিযানের পূর্বে ১৬ মে থেকে শুরু করে ঈদুল ফিতরের পূর্ব পর্যন্ত ১, ৬, ১২, ১৮ ও ৩২ নম্বর, ৫টি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। সে সময় ৯ হাজার ৪৬৩টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৮৭টিতে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া যায়।
চিরুনি অভিযানের সাথে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ১০ মে ২০২০ থেকে মোবাইল কোর্টও পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত মোট ৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অভিযান চলাকালে সকল এলাকাতেই এলাকাবাসীকে এডিস মশার বিস্তার রোধে সচেতন করা হয় এবং জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধানসহ সকলকে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার পরামর্শ প্রদান করা হয়।
অভিযান চলাকালে ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ, ডিএনসিসির বর্জ্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ, গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান আগামীকালও অব্যাহত থাকবে। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।
—