দূরবীন নিউজ প্রতিবেদক :
স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কপ-২৫) দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু অর্থায়নে সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) টিআইবির পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্মেলনে ‘ক্ষয়-ক্ষতি’ (Loss and Damage) মোকাবেলায় আলাদা তহবিল গঠনে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি; বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে ‘জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অনুমিত অবদান’ (Intended Nationally Determined Contributions – INDC) এর প্রতিশ্রুতি হালনাগাদ হয়নি এবং সর্বোপরি কপ-২৪ সম্মেলনে গৃহীত প্যারিস চুক্তির খসড়া ‘রুলবুক’ বা বাস্তবায়ন নির্দেশিকা চূড়ান্ত হয়নি।
অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বীমা সংস্থাসহ মুনাফাভোগী ব্যাক্তিমালিকানাধীন খাত প্রসারের পরিকল্পনায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “শিল্পোন্নত দেশের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২০ সাল হতে ‘নতুন’ এবং ‘অতিরিক্ত’ অর্থ হিসাবে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের বিষয়টি কপ-২৫ সম্মেলনের আলোচনায় স্থান না পাওয়ায় জলবায়ু অভিযোজন খাতে অনুদান ভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শুধু তাই নয়, ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম এর আওতায় ‘ক্ষয়-ক্ষতি’ মোকাবেলায় শিল্পোন্নত দেশ কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানে আলাদা তহবিল গঠন, ক্ষতিপূরণ প্রদানের নীতিমালা ও কর্ম পদ্ধতি নির্ধারণ এবং মেকানিজমটির চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে বলে প্রত্যাশা ছিলো সকল অংশীজনের, কিন্তু বিষয়গুলো নিয়ে সম্মেলনে কোন সিদ্ধান্ত না হলেও উল্টো ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় বীমা ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে মুনাফাভোগী বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে।”
এছাড়া, বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে ২০২০ সালের মধ্যে প্যারিস চুক্তিভুক্ত দেশসমূহের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অনুমিত অবদান (আইএনডিসি) এর প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি ও তা হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে প্রত্যাহার হওয়া এবং স্বচ্ছতা কাঠামো সম্বলিত প্যারিস চুক্তির ‘রুলবুক’ এর বাস্তবায়ন নির্দেশিকা প্রস্তুতে দেশসমূহ ঐকমতে পৌঁছাতে না পারাটা হতাশাজনক।
এই বিষয়গুলো পরবর্তী কপ-২৬ সম্মেলনে আলোচনার জন্য রেখে দেওয়ায় কার্যত ২০২০ সাল থেকে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নকে অসম্ভব করে তুলেছে বলে মনে করে টিআইবি।
এই প্রেক্ষিতে ২০২০ সাল থেকে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল বিশেষকরে অভিযোজন এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী অনুদান নির্ভর অর্থায়ন নিশ্চিত করা, প্যারিস চুক্তির সঠিক বাস্তবায়নে কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাংলাদেশের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ সকল দেশের অংশগ্রহণে সমন্বিত ক্লাইমেট ডিপ্লোমেসি জোরদার করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
অন্যদিকে, প্যারিস চুক্তির আওতায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে যে ‘স্বচ্ছতা কাঠামো’ প্রস্তাব করা হয়েছে তাও আইনী ভিত্তির মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে পরবর্তী সম্মেলনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চয়তায় পড়বে, যা কারো কাম্য হতে পারেনা।#