দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
নগরবাসীর সকলের সহযোগিতায় পূর্ব ঘোষিত ১২ঘন্টার আগেই ঢাকা উত্তর সিটির কোরবানীর (ডিএনসিসি) বর্জ্য শতভাগ অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। সচেতন নাগরিকদের আন্তরিক সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে বলেছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
আগামী দিনেও ঢাকা শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে জনগণ ও ঢাকা উত্তর সিটিকর্পোরেশনকে একসাথে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
আজ (১১জুলাই) দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ এ নগরভবনের হল রুমে ডিএনসিসির কোরবানির বর্জ্য অপসারণ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
ডিএনসিসি মেয়র আরো বলেন, ‘ঈদের দিন ০৭নং ওয়ার্ডের সাতটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রায় ৬০০০(ছয় হাজার) পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। নিজে সেখানে গিয়ে দেখেছি দুপুরের মধ্যেই ০৭নং ওয়ার্ডের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়।’
এবছর কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ০৭নং ওয়ার্ড প্রথম হওয়ায় সেখানে পুরষ্কার হিসেবে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ক্ষমতায় নয় বরং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমি দায়িত্ব নিয়ে এসেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে গতকাল পুরোটা সময় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি এবং নির্ধারিত সময়ে বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে পেরেছি।’
উল্লেখ্য, এবছর পরীক্ষামূলকভাবে ডিএনসিসির তিনটি ওয়ার্ডের ৯টি নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি দেয়া হয়েছে।
নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি হলে উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি খুব অল্প সময়ে বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব উল্লেখ করে আগামী ঈদে প্রতিটি অঞ্চলে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির আহ্বান করেন ডিএনসিসি মেয়র।
তিনি বলেন,’আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্দিষ্ট স্থানে প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করে দিব, মাংস বাসায় পৌছে দেয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থাও করে দিব। রাস্তায়, ফুটপাতে ও যেখানে সেখানে কোরবানি না দিয়ে আপনারা শুধু দায়িত্ব নিয়ে প্যান্ডেলে এসে পশু কোরবানি দিবেন।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আধুনিক জবাই খানা নির্মাণের জন্য দ্রুতই আমরা পদক্ষেপ নিব৷ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আমি নির্দেশনা দিয়েছে আধুনিক জবাইখানা নির্মাণের জন্য। গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের পাশেই উন্নত দেশের মতো আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা ২০২২ উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিস্তারিত:
#কোরবানির বর্জ্যের পরিমান:
ঈদের আগের দিন সকাল ১১টা হতে আজ সকাল ১১ ঘটিকা পর্যন্ত ৪২৬৭ টি ট্রিপে মোট ১৯২২৩ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
ঈদের আগের দিন: ট্রিপ-৬৮৪টি, বর্জ্য-৩৮৬৬ মেট্রিক টন। ঈদের দিন (রাত ১০টা পর্যন্ত): ট্রিপ- ১৫৮৮, বর্জ্য-৬৮৭২মেট্রিক
ঈদের পরের দিন (সকাল ১১টা পর্যন্ত) ট্রিপ-১৯৯৫টি, ৮৪৮৫ মেট্রিক টন ।
#পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যাঃ
কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ২৪০২ জন এবং অন্যান্য বেসরকারী ব্যবস্থাপনায়সহ সর্বমোট ৯৯৯০ জন কর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত করা হয়েছে।
#বর্জ্য অপসারণে ব্যবহৃত যান-যন্ত্রপাতিঃ
ঈদ উপলক্ষ্যে বর্জ্য পরিবহন সক্ষমতা কমপক্ষে ১০ হাজার টনে উন্নিতকরণে প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঈদের পূর্বের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী ২ দিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক/খোলা ট্রাক,ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি,বেসরকারী এবং ভাড়ায় পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৫৮৫টি গাড়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলের গাড়ী ব্যতীত যান-যন্ত্রপাতি:
পে-লোডার -৩৩টি, বেক-হো লোডার-৫টি, ড্রাম ট্রাক+৭১টি, খোলা ট্রাক-৮৩টি পিক-আপ -২৩৪টি, পানির গাড়ী-১০টি।
৩৩ টি ৫ টি ৭১ টি ৮৩ টি ২৩৪ টি ১০ টি।
কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলের নিয়ন্ত্রাধীন গাড়ির সংখ্যা-১৪০টি।
#পরিবেশদূষণ রোধে গৃহীত কার্যক্রমঃ
কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্বারা যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষে জবাই এর স্থানে ১২ টি ওয়াটার বাউজার দ্বারা তরল জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রে করা হয়।
৬লক্ষ ৫০হাজার পচনশীল বর্জ্য ব্যাগ, ৫৩টন ব্লিচিং পাউডার, ৮৬৬ক্যান (প্রতিটি ৫লিটার) পরিচ্ছন্নতার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
#আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের সক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
ল্যান্ডফিলে ঈদ-উল-আযহার অতিরিক্ত বর্জ্য পরিবেশসম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষে ১০ফিট X ২০ ফিট X ৪ফিট আয়তনের ০৩টি পরিখা খনন করা হয়।
ঈদ উপলক্ষে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ড্রেসিং কার্যক্রমে ৬টি এস্কেভেটর, ৪টি চেইন ডোজার, ২টি ট্যায়ার ডোজার ও ১টি পে-লোডার সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
#কন্ট্রোল রুম স্থাপন ও তদারকী টিম গঠনঃ
কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবন নীচ তলায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর: ১৬১০৬, ০৯৬০-২২২২৩৩৩, ০২-৫৫০৫২০৮৪
কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকী করার জন্য ২৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদারকী টিম গঠন করা হয়েছে।
# ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ঈদের ছুটিকালীন কর্মস্থলে অবস্থান করার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সাথে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহঃ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, এবং ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।