নিজস্ব প্রতিনিধি:
মেধাবী ও কর্মঠদের বঞ্চিত করে যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন নিয়মে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি নিয়ে সংশোধিত নীতিমালা কেনো অবৈধ ও বাতিল হবে না, তার জবাব চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।গত ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে এজিএম থেকে ডিজিএমের নির্বাচনী সাক্ষাৎকার। উচ্চ আদালত অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলেছেন।
গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ উক্ত বিষয়ে দায়ের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এই রুল জারি করেন।
রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা গণমাধ্যমকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি সংক্রান্ত সংশোধিত নীতিমালা ২০২২ এর বৈধতা এবং ৮১০তম সভার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সোনালী ব্যাংকের ফার্মগেট আওলাদ হোসেন মার্কেট ব্রাঞ্চের প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ আক্কাস আলীসহ ৭৯ কর্মকর্তা এই রিট আবেদন দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২৮ ফেব্রুয়ারির সভায় নতুন নীতিমালা অনুমোদন হয়। সেখানে বলা হয়েছে, অফিসার থেকে ডিজিএম পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিনগুণের বেশি হলে প্রণীত জ্যেষ্ঠ তালিকা থেকে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন সাক্ষাৎকারের জন্য বিবেচিত হবেন। এতে ১০০টি শূন্য পদের বিপরীতে কেবল জ্যেষ্ঠ ৩০০ কর্মকর্তা ডাক পাবেন। এর বাইরে অধিকতর যোগ্য হলেও তাদের পদোন্নতির জন্য ডাকা হবে না।
বর্তমানে একই পদে তিন বছর হলেই তিনি পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়ার যোগ্য হন। সেখান থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষেত্রে বিশেষ কাজ, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় কারও অবস্থান দুর্বল হলে তিনি জ্যেষ্ঠ হলেও পদোন্নতি পান না। এতে সব পর্যায়ে ভালো কাজ করার একধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৯ অনুযায়ী, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে গুরুত্ব দেওয়া হইবে’ এবং ‘কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসাবে তাহার পদায়ন বা পদোন্নতি দাবি করিতে পারিবেন না’ উল্লেখ আছে।এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে দি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ। সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী পদোন্নতি সংশোধিত নীতিমালা-২০২২ বাতিলসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।
চিঠিতে বলা হয়, অবিলম্বে বিতর্কিত এই নীতিমালা বাতিল করতে হবে। সকল পর্যায়ের প্রমোশনে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদেরকে টাকা ফেরত দিতে হবে। এছড়া কোন নির্দিষ্ট গোষ্টীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে অপরিহার্য পছন্দ রুপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য অপরিবর্তনীয় স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ণ করতে হবে। স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ণের পূর্ব পর্যন্ত আগের নীতিমালার ভিত্তিতে পদোন্নতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। একইসঙ্গে বিষয়টি পর্ষদে পাশ করাতে হবে।
এতে বলা হয়, ব্যাংকটির ৮১০ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন জন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাতকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন।’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২ এর সসঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতিতো দুরের কথা সাক্ষাতৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এরফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য শত শত কর্মী। এতোদিন শূন্যপদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুইজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নুতন আইন চালু হয়েছে ব্যাংকটিতে। পদোন্নতির ভাইভার জন্য শুধু সিনিয়রিটি তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা। #