দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বহুল আলোচিত বিসিআইসি’র আমদানিকরা প্রায় ৫৮২ কোটি টাকা মূল্যের ৭১ হাজার ৮০১ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আত্মসাতের সুনিদিষ্ট অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা ও নরসিংদী-২ আসনের সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কামরুল হাসান খান পোটন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্সের মালিক। এই মামলার অপর ৪ জন আসামী হলেন; পোটন ট্রেডার্সের মহাব্যবস্থাপক মো. শাহাদাত হোসেন (নিপু), পোটন ট্রেডার্সের মহাব্যবস্থাক মো. নাজমুল আলম (বাদল), পোটন ট্রেডার্সের উত্তরবঙ্গ প্রতিনিধি মো. সোহরাব হোসেন এবং পোটন ট্রেডার্সের খুলনা প্রতিনিধি মো. আতাউর রহমান।
রোববার দুদকের উপ পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান বাদী হয়ে সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করেনে। মামলা নম্বর-২২।
রোববার (২৬ নভেম্বর) দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দুদক সচিব বলেন, আসামীরা পরস্পর যোগশাজসে সরকারিভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করা ৫৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা মূল্যের ৭১ হাজার ৮০১ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বন্দরে খালাসের পর সরকারি গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। ২০২১- ২২ অর্থ বছরে বিদেশ থেকে এই সার আমদানি করা হয়।
৭টি জাহাজে আমদানিকরা এই সার বন্দর থেকে খালাস করে সরকারের বরাদ্দ করা নিধারিত গুদামে পৌঁছানোর জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটনের সাথে চুক্তি করা হয়। কিন্তু তিনি এই সার সরকারের বরাদ্দ করা নির্ধারিত গুদামে না পৌঁছিয়ে আত্মসাৎ করেন।
এরআগে দুদকের অনুসন্ধানকালে সরকারি সার আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় পোটনের প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে সরকার। এই মালার আসামীদের গ্রেফতার করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দেখবেন। প্রয়োজন হলে আইনী কাঠামোর ভেতরে আসামীদের গ্রেফতার করা হবে।
সূত্র মতে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুদকের উপ-পরিচালক মো. রফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান ও মো. আবুল কালাম আজাদের সমন্বয়ে একটি টিম সার কেলেঙ্কারির বিষয়টি অনুসন্ধান করেন। দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন,পরিবহন ঠিকাদার কামরুল আশরাফ খানের বিরুদ্ধে সার আত্মসাতের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরই মামলা দায়ের হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) আমদারি করা ৭১ হাজার ৮০১ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বন্দর থেকে খালাসের পর সরকারি গুদামে রাখার দায়িত্ব ছিল সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনের মালিকানাধীন পরিবহন প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের; কিন্তু ওইসব সার গুদামে না পৌঁছে দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে হাইকোর্টের নজরে আসে।
গত ৫ জানুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে সার আত্মসাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুদককে নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করেন। ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বলেন আদালত। মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনে বলা হয়, কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি- তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। মেসার্স পোটন ট্রেডার্স যে সার আত্মসাৎ করেছে, তা উঠে এসেছে সারের আমদানিকারক শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। সার খালাস হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ মের মধ্যে। সার সরবরাহ না করার পর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিসিআইসি। সর্বশেষ গত ২০ ডিসেম্বর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বিসিআইসির পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। সার কেলেঙ্কারির এই ঘটনায় বিসিআইসির চেয়ারম্যানের কাছেও ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। # কাশেম