দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
সরকারি কর্মচারী অবসরে থাকাকালে অপরাধী সাব্যস্ত হলে তার পেনশন সুবিধা বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহারের বিধান বহাল রাখা হয়েছে। তার শাস্তি হিসেবেএই বিধান বহাল রাখার সিদ্ধান্ত রেখেছে সরকার।
সোমবার (২৬ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠক আগের বিধানটি বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা।
বৈঠকে এই প্রস্তাব এবং আরো কয়েকটি সংশোধনীসহ ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০২১’ এর খসড়াটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। তবে পেনশন বাতিলের প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়নি বলে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছিল। আইনের ৫১ (৪) ধারায় বলা হয়েছেÑ ‘অবসর সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বা কোনো গুরুতর অসদাচরণের দোষে দোষী সাব্যস্ত হইলে, কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগ প্রদান করিয়া, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, তাহার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করিতে পারিবে।’ এ ধারাটি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ক্যাবিনেট সেটি এগ্রি করেনি। ক্যাবিনেট আগেরটিই বহাল রেখেছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাব ছিল যে রিটায়ার্ড করবে তার যাতে পেনশন থেকে কোনো টাকা কাটা না হয়। মন্ত্রিসভা এটি অনুমোদন দেয়নি। আগে যেটা ছিল সেটাই রেখে দিয়েছে। আরেকটি সংশোধন আনা হয়েছিল, আইনে আছে- পিআরএলে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্য কোথাও চাকরি করা কিংবা বিদেশে যাওয়ার জন্য সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। প্রস্তাব আনা হয়েছিল এ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন লাগবে। এটিও ক্যাবিনেট এগ্রি করেনি। আগে যেটি ছিল সেটিই থাকবে। তবে আগের আইনে কিছু করণিক ভুল ছিল সংশোধিত আইনে সেগুলো ঠিক করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সভায় বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে বলেন, বার কাউন্সিলে আইনে বার কাউন্সিলে ৩১ মে’র মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। তিন বছরের জন্য তাদের কমিটি হবে এবং সেই কমিটি তিন বছরের মধ্যে ৩১ মের মধ্যে নির্বাচন দেবে। কিন্তু মহামারীতে বা দুর্যোগ ইস্যু হলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন না হলে কী করণীয়, তা আইনে ছিল না। এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে এক বছরের জন্য সরকার অ্যাডহক কমিটি করে দিতে পারবে এবং ১৫ সদস্যের এ কমিটি ম্যাক্সিমাম এক বছর থাকতে পারবে এবং তারা এক বছরের মধ্যে নির্বাচন দেবে।
আরো তিনটি উপজেলা হচ্ছে : এ দিকে দেশের তিনটি জেলায় নতুন করে আরো তিনটি উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে উপজেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৯৫টি। সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন উপজেলাগুলো হচ্ছে, মাদারীপুরের ডাসার, কক্সবাজারের ঈদগাও ও সুনামগঞ্জের মধ্যনগর।
গত ২৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ও নিকার সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। একই বৈঠকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে শান্তিগঞ্জ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এখন থেকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা শান্তিগঞ্জ উপজেলা নামে পরিচিত হবে।
উপজেলা থেকে বেশ দূরে এবং দুর্গম এলাকা হওয়ায় ‘ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল’ না হলেও স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন উপজেলাগুলো স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে জানান আনোয়ারুল ইসলাম। তবে এর পর থেকে এ ধরনের দাবি না তোলার জন্য বৈঠকে জানিয়ে দেয়া হয়। তিনি জানান, নতুন স্বীকৃতি পাওয়া তিনটি উপজেলাই আগে থানা ছিল।
এ ছাড়াও বৈঠকে দোহার পৌরসভার সীমানা যোগ-বিয়োগ এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (শাবিপ্রবি) সিটি করপোরেশনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
লকডাউনে শিল্পকারখানা খুললে ব্যবস্থা : মহামারী নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মধ্যে কোনো শিল্পকারখানা খুললে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর আগে কয়েক দফা লকডাউনে শিল্পকারখানা খোলা রাখা হয়েছিল। কিন্তু মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় গত ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে শিল্পকারখানাও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যেও কিছু শিল্পকারখানা খোলা রাখা হচ্ছে বলে খবর মিলছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কারখানা খুলে থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি।’
সংক্রমণ যে গতিতে ছড়াচ্ছে, তাতে এখন কঠোর বিধিনিধেষের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি নাÑ জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা যেভাবে ছড়িয়ে গেছে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কঠিনভাবেই তো প্রজ্ঞাপন জারি করেছি। এ ব্রেকটা খুব দরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সংক্রমণ কমানোর জন্য ব্রেক প্রয়োজন। ব্রেকটার জন্য এটিই উপযুক্ত কৌশল, সেটি হচ্ছে বিধিনিষেধ।
মহামারী নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে আজ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক : করোনা মহামারীর দেড় বছরের মধ্যে এখনো দেশে বিপর্যয়কর অবস্থা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন দিয়ে রাখা হলেও সংক্রমণ-মৃত্যু কোনোটিই কমছে না। এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী, তা ঠিক করতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় বসছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দেশে দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু দুটো রেকর্ড গড়ার দিনে এ সিদ্ধান্ত জানালেন তিনি।
চলমান ‘কঠোর লকডাউন’ ৫ আগস্টে পর্যন্ত চালানোর ঘোষণা রয়েছে। সংক্রমণ কমাতে বিশেষজ্ঞরা লকডাউনের পক্ষে বললেও তা আবার মানুষকে জীবিকার সঙ্কটে ফেলছে, সেটিও সরকারকে ভাবতে হচ্ছে। এই দোটানার মধ্যে লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়ানো হবে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তা আজকের সভায় ঠিক হবে। ‘বড়’ সভা বললেও এই সভায় কারা কারা থাকছেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
#