দূরবীন নিউজ প্রতিবেদক :
ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ ও ব্যাপক অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের লক্ষ্যে ব্যাংকিং কমিশন করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
তবে সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি কমিশন গঠনের দাবী জানিয়েছে টিআইবি।
একই সাথে বহুল প্রত্যাশিত কমিশনটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে গঠন করা হলে তা একটি অর্থহীন ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত হবে বলেও মনে করে টিআইবি । কারণ এক্ষেত্রে স্বার্থের কারণে কমিশন কর্তৃক নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে ব্যাংকিং পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং কার্যকর সুপারিশ প্রণয়ন সম্ভব হবে না।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই মতামত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে যে, ব্যাংকিং খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার।
এ খাতের সংস্কারে টিআইবিসহ বিভিন্ন মহলের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে উক্ত সিদ্ধান্ত হওয়া ইতিবাচক, কিন্তু আমরা মনে করি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এই কমিশন গঠন হবে দায়সারা, অর্থহীন ও অপরিণামদর্শী একটি সিদ্ধান্ত।
কেননা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক যেমন নিয়ন্ত্রকের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি; তেমনি অনেক ক্ষেত্রে যারা এ সংকটের জন্য দায়ী তাদের দ্বারাই প্রভাবিত হবার পরিচয় দিয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হলে তা স্বার্থের সংঘাত তৈরি করবে এবং কমিশন গঠনের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতই কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ব্যাংকিং খাতে কাক্সিক্ষত সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশন হতে হবে স্বাধীন। যা এ খাত সংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ সুখ্যাতিসম্পন্ন ও গ্রহণযোগ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠন করতে হবে। যারা বাস্তবতার নিরিখে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ও নির্মোহভাবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা পেশ করবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার কায়েমি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তা বাস্তবায়ন করবে। অন্যথায় এ ধরনের ক্যাঙ্গারু কমিশন গঠন কোনো কাজেই আসবে না।”
স্বাধীন কমিশন গঠনের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়ে ড. জামান আরো বলেন, “উচ্চ হারের প্রবৃদ্ধির বিপরীতে, তীব্র তারল্য সংকটসহ ব্যাংকিং খাতের এই দুরবস্থার মধ্যে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে একটি স্বাধীন কমিশন কর্তৃক বস্তুনিষ্ঠ ও প্রভাবমুক্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রণীত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে অপরিণামদর্শিতার পরিচায়ক হবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই যে, সরকার এ পরিস্থিতির গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারবেন এবং নিরপেক্ষ, যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন, নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্ব›দ্বমুক্ত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অবিলম্বে একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করবেন।” #