মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৪ অপরাহ্ন

শিল্প-কারখানা তড়িঘড়ি করে খোলবার সিদ্ধান্ত , জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা বি.আই.পি’র

দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পুরো দেশকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকিকে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানা সমূহ খুলে দেবার প্রক্রিয়া শুরু করায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

রোববার (২৬ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইতিমধ্যে কারখানাতে যোগ দেবার নির্দেশনা পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গার্মেন্টস কর্মীরা ঢাকা ও এর আশেপাশের কারখানাতে যোগ দেবার জন্য পাঁয়ে হেঁটে ও অন্যান্য মাধ্যমে আসা শুরু করছেন।

আমাদের স্মরণ আছে যে, ইতিপূর্বে গার্মেন্টস খোলা বন্ধের বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতার কারণে অনেক গার্মেন্টস কর্মীর বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় আসবার ফলে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝূঁকি তৈরি হয় এবং বিষয়টি জনগণের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

গত ২৩শে এপ্রিল সরকারের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা অবহিত হয়েছি, শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে উৎপাদন ও রপ্তানীমুখী শিল্প সহ সকল কলকারখানা চালু করবার অনুমতি প্রদান করেছে। ইতিপূর্বে গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা অবহিত হয়েছি, করোনা ঝুঁকির মধ্যেই গার্মেন্টস কারখানা চালু করতে চান পোশাক শিল্প মালিকরা। বিশেষত, যাদের হাতে রপ্তানি আদেশ রয়েছে, তারা কারখানা চালু করতে চাইছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) মনে করে, বিদ্যমান বাস্তবতায় অধিকাংশ শিল্প কারখানার জন্য কারখানার অভ্যন্তরে কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত দুরূহ। একইসাথে শ্রমিকরা বস্তিসহ নিম্ন আয়ের আবাসন এলাকায় অতিঘন পরিবেশে যেভাবে জীবন-যাপন করেন, সেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব।
শিল্প-কারখানা চালু করা এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবার বিষয়টির বহুমাত্রিকতা আছে। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা দিতে হলে পরিকল্পনার সকল অনুষঙ্গ বিবেচনায় নেয়া উচিত। আর সেকারণেই কল-কারখানার অভ্যন্তরীণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবার পাশাপাশি, শ্রমিকদের বাসস্থানের অভ্যন্তরীণ বসবাসের পরিবেশ, শ্রমিকদের কর্মস্থলে যাতায়াত এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাদি নিশ্চিত করবার বিষয়সমূহ এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিবেচ্য হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আসন্ন মে মাসে করোনা সংক্রমণ চুঁড়ায় উঠতে পারে বলে শংকার কথা প্রকাশ করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির চরম বিপর্যয়কর সময়টি আসা এখনো বাকি এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিধি নিষেধ শিথিল করবার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।

এই প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশে শিল্প-কারখানা সমূহ ঢালাওভাবে খোলে দেওয়া হলে বিদ্যমান বাস্তবতায় তা এক স্বাস্থ্য বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। আমাদের শিল্প-কারখানার শ্রমিকেরা কারখানার অভ্যন্তরে শ্রমঘনপরিবেশে কিংবা অতিঘন বাসস্থানে করোনা সংক্রমিত হতে পারেন যা পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে কমিউনিটি সংক্রমণের ঝূঁকি তৈরী করবে। এই সংক্রমণ কারখানা এলাকা হতে আশেপাশের এলাকা এবং নিম্ন আয়ের আবাসন এলাকা হতে নগর ও অঞ্চলের আশেপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যগত, আর্থ-সামাজিক, জনঘনত্ব ও স্থানিক-পরিকল্পনাগত বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স নিম্নের প্রস্তাবনাসমূহ সরকার ও নীতি-নির্ধারণীমহলের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দেয়া উচিত বলে মনে করে।

প্রথমতঃ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও পরিকল্পনাগত বাস্তবতায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলাসমূহে জনঘনত্ব ও জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি হওয়াতে এবং একইসাথে নিম্ন আয়ের আবাসন এলাকার বাসস্থান পরিবেশ অতিঘন হওয়াতে এ অঞ্চলসমূহে করোনা সংক্রমণ বেশি হয়েছে।
বৈশ্বিক চিত্রে ও দেখা যায়, আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও অতিঘনত্বের বড় শহরগুলোতে করোনা সংক্রমন বেশি হয়েছে। পরিকল্পনার দৃষ্টিকোন থেকে তাই শিল্প-কারখানা খুলে দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহনে এই তিন জেলাকে প্রাধিকার না দিয়ে বরং দেশের অন্য অঞ্চল বিশেষত গ্রামগুলোতে অগ্রাধিকার দিয়ে কিভাবে অর্থনীতি সচল করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ সারাদেশের প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের কৃষক ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের এখনই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। একই সাথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে কিভাবে আমাদের খাদ্য-শস্যসহ অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখা যায় সেদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন থাকলে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে সহজ হবে।

তৃতীয়তঃ সরকারের তরফ থেকে অতি প্রয়োজনীয় শিল্প কারখানার বিশেষ তালিকা তৈরী করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলাসমূহে এই ধরনের শিল্প কারখানা চালু রাখবার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি ও আনুষঙ্গিক নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। একই সাথে এই তালিকার বাইরে অন্যান্য শিল্প-কারখানা যেন বিধিনিষেধের আওতায় থাকে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নজরদারি করা দরকার।

চতুর্থতঃ সকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য শিল্প-কারখানার মালিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। একইসাথে শহর ও গ্রামের শ্রমিক-মজুরসহ নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে মানবিক ত্রাণ সহযোগিতা ও নগদ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে করোনা ক্রান্তিকালে জীবনধারণে সহযোগিতা করা উচিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স মনে করে, স্বাস্থ্য না অর্থনীতি আগে এই দ্বন্দে না গিয়ে মানুষের জীবনকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে আমাদের নীতি নির্ধারণ করা উচিত। একইসাথে এ ধরনের যে কোন সিদ্ধান্ত প্রণয়নে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি ডাক্তার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। মানুষের জীবন যেখানে সংকটাপন্ন, সেখানে তাড়াহূড়ো করে বিপর্যয় না ডেকে সমন্বিত প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে বি.আই.পি. মনে করে। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২২ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০২ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩০ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৪ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪০ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12